সমাজে অসহিষ্ণুতা আর নৃশংসতার সংস্কৃতি কী পর্যায়ে গেছে তা দেখানোর জন্যই যেনো একের পর এক বর্বর ঘটনা দেখছি, এরই সর্বশেষ প্রকাশ দেখা গেলো লালমনিরহাটে। শুনে যা বিশ্বাস হয় না, বা যা বিশ্বাস করতে নিজের ভেতর প্রতিরোধ তৈরি হয় পরে দেখি সেগুলোই সত্যি। দল বেঁধে ধর্ষণ, দল বেঁধে মানুষ খুন, দল বেঁধে বিদ্বেষ প্রচার সবই যেন চলছে অবাধে! কাউকে কোনো অপরাধে অপরাধী ঘোষণা করলেই তাকে জুলুম ও খুন করা জায়েজ – এটা রাষ্ট্রীয় বাহিনী অবিরাম চর্চা করে যাচ্ছে।
সমাজের ভেতর যেসব মানুষ নিজের ভেতরে মানুষের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, বিবেচনাহীনতার বিষ নিয়ে দিন কাটায় তারাও মনে করে কাউকে অপরাধী ঘোষণা করলে তাকে জুলুম করা, পেটানো, আগুনে ফেলা, খুন করা সম্ভব। আর এর সাথে যদি ধর্মের মিশেল দেওয়া যায় তাহলে ছোয়াব/পূণ্য কামানোর লোভে আরও মানুষ জড়ো করা সহজ হয়।
বাংলাদেশ, ফ্রান্স, মিয়ানমার, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই হোক- মানুষের পরিচয় যাই হোক- মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কারও কোনো মতামত/সমালোচনা/ লেখা পছন্দ না হলে, বা তাতে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার প্রতিবাদ/ জবাব হতে হবে মতামত/সমালোচনা/ লেখা দিয়েই। দেশি বা বিদেশি কেউ উস্কানি দিলে তাকে সনাক্ত করার ও তা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার সক্ষমতাও সমাজে তৈরি হতে হবে। নইলে ধর্ম, জাতি, বর্ণ বিদ্বেষের যে উন্মাদনা বিশ্বজুড়ে অসহনীয় অবস্থা তৈরি করছে তা থেকে রক্ষা পাবার কোনো উপায় নাই।
কিন্তু একচেটিয়া-কর্তৃত্ববাদী শাসনে যখন দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বসে পড়ে, কর্পোরেট বা ক্ষমতার স্বার্থে যখন মানুষের মধ্যে বিদ্বেষের চাষ হতে থাকে, যখন মানুষ কোনো কিছুর উপর ভরসা করতে পারে না তখন যেন সবকিছু ভেঙে পড়তে থাকে। এরকম সংকট সময়ে সমাজ থেকেই মানুষের শক্তি তৈরি হওয়া, বিশ্বজুড়ে অমানুষের বিরুদ্ধে মানুষের সংহতি তৈরি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ফেইসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত।