fbpx

সিনেমার গল্পকেও হার মানায় রিপার জীবন সংগ্রাম

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

কুমিল্লার মেয়ে ইশরাত জাহান রিপা। উচ্চ মাধ্যমিকের পর ভালোবেসে সবার অমতে বিয়ে করেন। পারিবারিকভাবে আর্থিক অবস্থান ভালো থাকলেও রিপার স্বামী ছিলেন বেকার। সংসার জীবনের শুরু হতে না হতেই ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। কিন্ত কিছু সময় পরে স্ত্রী-সন্তান রেখে জাপান পাড়ি জমান রিপার স্বামী। তবে বিদেশে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ রাখেন নি রিপার সঙ্গে।

যেহেতু পরিবারের অমতে বিয়ে, তাই মোটামুটি একাই জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর শ্বশুরবাড়ি থেকেও কোনো সাপোর্ট পাননি তিনি। নিজের কোলের শিশুকে নিয়ে মেয়েদের হোস্টেল বা মেসে থাকা শুরু করেন। আর টিউশন, বাচ্চাদের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকতা ও কোচিংয়ের ক্লাস নিয়ে নিজের খরচ মেটাতেন।

এরই মাঝে করোনা তছনছ করে দেয় রিপার স্বপ্ন। আর্থিক সংকটে ও পড়ে যান তিনি। শুধু তাই নয়, চার মাসের ভাড়া দিতে না পারায় ঘর ছাড়ার নোটিশ দেয় বাড়িওয়ালা। নিয়তির যাঁতাকলে পিষ্ট হন রিপা।

এসময় নিজেই নিজের সাথে  যুদ্ধ করেন। ঠিক করেন, জীবনে বাঁচতে হলে হার মানা যাবে না। তাই জীবনের মোড় ঘুরানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।  নিজের একমাত্র সম্বল সোনার কালের দুল মাত্র দশ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এর মধ্যে সাত হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া শোধ করেন। বাকি তিন হাজার টাকায় বাটিকের সাতটি পোশাক নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। এভাবেই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শুরু হয় রিপার।

তার ফেসবুক পেজের নাম ‘ফ্যাশন বাই রিপা’। যেখানে কুমিল্লার বিখ্যাত বাটিকের কাপড় ও পোশাক বিক্রি শুরু করেন।

সিনেমার গল্পকেও হার মানায় রিপার জীবন সংগ্রাম

নিজের  ডিজাইন করা পোশাকে  নিজেকে সাজিয়েছেন রিপা  

রিপা বলেন, “অনলাইনে ব্যবসা শুরুর পর দেখা পাই উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স) ফেসবুক গ্রুপ ও আমার পথ প্রদর্শক রাজিব আহমেদ স্যারের। আমার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে উই’র ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিংগুলোর জন্য। উইতে এসে মাত্র দশ দিনে এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারি। সেখান থেকেই আমার উদ্যোগ ও পণ্যের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়ে। খুচরা বিক্রির চেয়ে পাইকারি পণ্যের বিক্রিই ছিল বেশি। ‘

সিনেমার গল্পকেও হার মানায় রিপার জীবন সংগ্রাম

উইয়ের  উপদেষ্টা  এবং ই- ক্যাবের  সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদের সঙ্গে  রিপা

তবে এ বন্ধুর পথে পরিবার ও আত্মীয়দের কোথাও থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। নিজের সংগ্রামের কথাগুলো বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান রিপা। চোখের কোণায় জল ছল ছল করে ওঠে।

বলেন, সাত বছরের ছেলেকে মেসের মেয়েদের কাছে রেখে বাইরে যেতাম। একা হাতেই পণ্য সংগ্রহ, কুরিয়ার ও ডেলিভারির কাজ সব করতে হতো । মাথায় শুধু ঘুরতো, জীবনে মাথা নোয়াবো না। যখন মেসে কেউ থাকতো না, তখন খাবার রান্না করে বাচ্চাকে বিছানায় রেখে একা বেরিয়ে যেতাম। কখনো আবার বাচ্চাকে নিয়ে সারাদিন ছুটতে হতো নিজের স্বপ্নের পেছনে।’’

নিজের সফলতার কথা বলতে গিয়ে রিপা বলেন, ২০২০ সালের মে মাসে মাত্র তিন হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। জুন থেকে ডিসেম্বর, মাত্র ছয় মাসে ১৪ লাখ টাকার উপরে পণ্য বিক্রি করি।

সিনেমার গল্পকেও হার মানায় রিপার জীবন সংগ্রাম

কুমিল্লার বিখ্যাত বাটিকের কাপড় ও পোশাক বিক্রি পাওয়া যায় এখানে

তবে এখানেই শেষ নয়। এতো দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সাত বছর পর নীড়ে ফিরে গেছেন রিপা। সফলতা দিয়ে ফিরে পান নিজের বাবা-মার কাছে আশ্রয়। নিজের পড়াশোনা ও ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই ভাড়া ঘরে বাস করেন তিনি।

রিপা কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ করেছেন। এখন কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে একই বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

Advertisement
Share.

Leave A Reply