fbpx

সুপারশপ বা এটিএম বুথের রশিদ হতে পারে মৃত্যুর কারণ!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সুপারশপ, রেস্তোঁরা, এটিএম বুথ থেকে আমরা যে কাগজের রশিদ নিয়ে ব্যাগে ঢুকাচ্ছি, একবারও কি মনে হয়েছে এরমধ্যে থাকতে পারে জীবননাশক উপাদান? এর থেকে হতে পারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ কোন রোগ।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। সুপারশপ বা এটিএম বুথ থেকে প্রাপ্ত কাগজের রশিদের কালিতে আছে বিসফেনল-এ বা বিপি-এ নামের মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। যা হাতের সংস্পর্শে দেহে প্রবেশ করতে পারে, হাত দ্বারা মুখের মাধ্যমে পেটে যেতে পারে, অথবা বাতাসে দ্রবীভূত হয়ে নিঃশ্বাসের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেভাবেই প্রবেশ করুক, বিপিএ যেকোন বয়সের মানুষকেই ফেলতে পারে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে, জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থা এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এসডো দেশের বিভিন্ন সুপারশপ, খাবারের দোকান এবং এটিএম বুথের ১৩টি রশিদ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটার দালাথ ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে। পরীক্ষার ফলাফলে রশিদগুলোতে পাওয়া গেছে ০.৮ থেকে ৩.৭ শতাংশ ক্ষতিকর বিপিএ। যেখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিপিএ ব্যবহারের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে ০.২ শতাংশ। এরবেশি বিপিএ ব্যবহার মানবদেহের জন্য ডেকে আনবে দীর্ঘস্থায়ী ভয়ংকর ক্ষতি।

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বিবিএস বাংলাকে বলেন, ‘চেইনশপ, খাবারের দোকান বা এটিএমের বুথের রশিদে যে কালিটা ব্যবহার করা হয়, তা গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু তাদের নয় আমাদের সবার জন্যেই তা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। আমরা আগে অন্য কাগজ ব্যবহার করতাম না, কই তখন তো এরকম মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার হতো না। এটি যে শুধু মানবদেহে ক্ষতি করছে, তা কিন্তু নয়। এটি মাটি, পানি, বায়ুতে মিশে ফুড চেইনের মাধ্যমে আবারও আমাদের শরীরে প্রবেশ করার ঝুঁকি থাকে। তাই এটি রোধে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাই সচেতন থাকতে হবে। বিসফেনল-এ এর ব্যবহৃত হয়না, এমন থার্মাল কাগজ ব্যবহার করতে হবে যেকোন রশিদের ক্ষেত্রে।’

সুপারশপের বিক্রয় রশিদ, রেস্তোঁরার খাবারের বিল, প্রেসক্রিপশনের লেভেল, এয়ারলাইন টিকেট, লটারির টিকেট, এটিএম বুথের রিসিটের জন্য ব্যবহৃত থার্মাল কাগজ থেকে বিপিএ মানব দেহে যে ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে, তা সাধারণ মানুষ জানেনই না বলা যায়। রাজধানীর কয়েকটি সুপারশপ ও এটিএম বুথের বাইরে কয়েকজন ভোক্তাকে জিজ্ঞেস করতেই জানালো, তারা এই মাত্র বিষয়টি জেনেছে। যদি রশিদে এরকম ভয়ংকর কোন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার হয়ে থাকে, তবে তা অচিরেই বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার বলেন, ‘জনসাধারণের মাঝে বিপিএর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচেতনতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। শরীরে বিপিএ প্রবেশের ফলে নানা অসুখ বিসুখ বাসা বাধার পাশাপাশি কমতে পারে প্রজনন ক্ষমতাও। বাইরে থেকে বয়ে আনা বিপিএযুক্ত রিসিটগুলো ঘরের বাতাসে ছড়ায় মারাত্মক জীবানু। তাতে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে মেধা বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করছে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান।’

এ সম্পর্কে স্বপ্ন ও মীনা বাজারের কর্তৃপক্ষ জানালেন, গবেষণায় বিপিএর ক্ষতিকর দিকগুলো উঠে আসার সাথে সাথেই বিক্রয় রশিদের পুরো প্রক্রিয়াটিই পরিবর্তনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ব্যস্ত জীবনে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি দিনে অন্তত একবার এটিএম রশিদ বা অন্য কোন রশিদের সংস্পর্শে আসেন না। আর যারা পেশাগত কারণে দিনে অসংখ্যবার বিপিএযুক্ত থার্মাল পেপার স্পর্শ করছেন, তারা থাকছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকির একদম শিখরে।

বিশ্বের উন্নত দেশে থার্মাল কাগজে ক্ষতিকর বিপিএ ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং করা হয়েছে আইনও। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও বিপিএর ক্ষতিকারক প্রভাবগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও আইন করার তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply