দেশিয় বুটিক শিল্পে ‘সূতা’র পথচলা গত বছরের ১২ আগস্ট। সময়টা করোনাকাল। কিন্তু উদ্যোক্তা যুগল কামরুজ্জামান ইমন ও সনেট দমে যাননি। মনে হয়েছে প্রতিকূলতাই সৃষ্টির উপলক্ষ্য।
শুরুটা প্রসঙ্গে ‘সূতা’র উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান ইমন বলেন, ‘কাজ করলে পোশাক নিয়েই করব, এমন একটা ভাবনা শুরু থেকে ছিল। মনে হয়েছে, পোশাক তৈরি করতে শেখাটা মানব সভ্যতাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য, বিশেষ করে বৃষ্টি, ঠান্ডা ও বিভিন্ন পোকামাকড়ের দংশন থেকে বাঁচার জন্য পোশাক জরুরি ছিল। প্রাথমিক দিকে পোশাক তৈরিতে গাছের পাতা, ছাল-বাকল ও পশুর চামড়া ব্যবহার করা হতো। গত কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এই পোশাকের বিষ্ময়কর বিবর্তন হয়েছে যা এখনো চলমান।’
সেই চলমানতাকেই ধারণ করতে চাই আমরা ‘সূতা’য় – বলছিলেন ইমন। শুরুর চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো একটি নাম ঠিক করা, যেটা পণ্যের ধরনের প্রতিবিম্ব হবে। যেটি সব ধরনের শ্রেণি বিভক্তি বিলীন করে পোশাক তৈরির মূল উপকরণকেই তুলে ধরবে। এর জন্য আমরা বেছে নেই ‘সূতা’ নামটি। এককভাবে একটি সূতার আকৃতি যেমন ক্ষুদ্রতার প্রতীক তেমনই অনেক সূতার সমষ্ঠির বুননে তৈরি হয় প্রয়োজনীয় এবং ফ্যাশনের প্রধান এই উপকরণ। এই একক একটি সূতার আকৃতি প্রাধান্য পেয়েছে ‘সূতা’র লোগো ডিজাইনে। সকলের সহযোগীতায় এবং সমষ্ঠিতগত সূতার বদ্ধনে বুনন চলছে একটি স্বপ্নের, একটি ব্র্যান্ডনেম প্রতিষ্ঠার।
তিনি বলেন, ‘সূতা’ বর্তমানে কাজ করছে নিজস্ব ডিজাইনের টি-শার্ট নিয়ে। কাপড়ের মান ও রঙ নির্বাচন এবং সেলাইয়ের ধরনে রয়েছে ‘সূতা’র নিজস্বতা। পণ্যের গুণগত মান প্রাধান্য দিয়ে আমরা সচেতনতার সাথে কাজ করছি। শীঘ্রই টি-শার্ট এর পাশাপাশি পোশাকের অন্যান্য ধরণ নিয়েও কাজ শুরু হবে। পণ্যের ভিন্নতা বজায় রাখতে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে ‘সূতা’। সেই সাথে পণ্য গ্রাহকের হাতে যথাসময়ে পৌঁছে দিচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় অতি ক্ষুদ্র অংশগ্রহন এবং প্রচেষ্টা হিসেবে ‘সূতা’ পণ্য প্যাকেজিং-এ প্লাস্টিক জাতীয় কোনো উপকরণ (পলিব্যাগ) ব্যবহার করেনা। এটিকে পর্যায়ক্রমে গ্রিন বিজনেসে রূপান্তরের চেষ্টা থাকবে আমাদের।’
নিজের প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপনে নিজেই হাজির হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান। নিজেদের যা আছে তাই নিয়েই ভোক্তাদের সামনে হাজির হওয়ার চেষ্টা করেছি। ব্যয়বহুল মডেলচর্চিত প্রচারণায় আমাদের আগ্রহ নেই।’
কামরুজ্জামান ইমন বেশ কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞাপন এবং সিনেমা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার পর প্রায় ছয় বছর একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ব্র্যান্ড এন্ড মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন। তারপর নিজস্ব চিন্তাধারায় সৃষ্টিশীল কিছু করার আগ্রহ থেকে তিনি এবং তার ব্যক্তিজীবনের সর্ববিষয়ের একান্ত সহযোদ্ধা সনেট এর উদ্যোগ এই ‘সূতা’। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে ইংরেজীতে “Sutabyes ” লিখে সার্চ দিলে হাতের মুঠোতেই পাওয়া যাবে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ ‘সূতা’র পণ্য।
ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সকলের ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং সমর্থন কাম্য। আশা করছি সকলেই ‘সূতা’র এই পথচলায় সাথেই থাকবেন।’