করোনার উচ্চ সংক্রমণে দেশের মানুষ যখন দিকভ্রান্ত, ঠিক তখনই দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াল থাবা। দুশ্চিন্তার কারণ, করোনার মতো ডেঙ্গুও ভাইরাসজনিত রোগ। এর নেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা।
বর্ষা মৌসুম অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে এডিস মশার বিস্তার। ডেঙ্গু জ্বরের একমাত্র বাহক এডিস মশার বিস্তারে বাড়ে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০ হাজারে। এরমধ্যে শুধু আগস্ট মাসেই আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪২ জন। আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে ঢাকায় অবস্থানরতদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তবে সারা দেশেই রয়েছে ডেঙ্গুর উদ্বেগজনক সংক্রমণ।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এক হাজারের বেশি রোগী। আগের উপসর্গের সাথে নতুন উপসর্গ যুক্ত হওয়ায় এবার ডেঙ্গুতে অসুস্থ হবার সংখ্যা বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বিবিএস বাংলাকে বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না। প্রতি চারজনের একজনের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে কারও মৃদু, কারও মধ্যে আবার দেখা দিচ্ছে ভয়ানক লক্ষণ।
ডেঙ্গুর মৃদু লক্ষণগুলো হলো:
- জ্বর, শরীর ব্যাথা,
- মাথাব্যথা ও চোখের পেছনের দিকে ব্যাথা,
- মাংসপেশি, হাড় এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা
- শরীরে ছোপ ছোপ দাগ বা লাল দানাদার র্যাশ
এসব মৃদু লক্ষণ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ডেঙ্গুর ভয়ানক ও তীব্র লক্ষণগুলো হলো:
- তীব্র পেটব্যথা; দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া,
- কিছু খেতে না পারা; নাক, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ;
- বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ; শ্বাসকষ্ট;
- প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা কিংবা খিটখিটে ভাব,
- হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, অসংলগ্ন কথাবার্তা;
- তাপমাত্রায় বিশাল তারতম্য, হাত–পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া;
- জ্বর থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়া;
- চার–ছয় ঘণ্টা ধরে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা না হওয়া;
ডা. লেলিন আরও বলেন, ডেঙ্গু হলে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। পানি ও পানি জতীয় খাবার বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে। জ্বর বা ব্যাথার জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর সেরে গেলেও সতর্ক থাকতে হবে।
মৃদু বা ভয়ানক যেকোন উপসর্গ দেখা দিলেই ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা করানোর তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। একইসঙ্গে ডেঙ্গুর লক্ষণ তীব্র হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শও দেন তারা।