fbpx

হিজড়া দৌরাত্মের সমাধান কী?

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

হিজড়াদের বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়, ট্রান্সজেন্ডার। প্রকৃতির নিয়মেই এরা অস্বাভাবিক। আর সব মানুষের চেয়ে আলাদা।

চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে, নারী-পুরুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনে এক্স-এক্স প্যাটার্ন হলে তা হয় কন্যা শিশু আর এক্স-ওয়াই প্যাটার্নে জন্ম নেয় ছেলে শিশু। জরায়ুতে ভ্রুণের বিকাশ হওয়ার সময় মায়েদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হয়। আর এক্স- এক্স- ওয়াই, আবার এক্স-ওয়াই-ওয়াই এর প্যাটার্নে ছেলে বা মেয়ে শিশু হয়ে থাকে। এরপর জেনেটিক পরির্বতনের কারণে কেউ হিজড়ায় পরিণত হয়।

হিজড়াদের প্রকারভেদ আছে। শারীরিকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী বৈশিষ্ট যাদের, তাদের বলা হয় অকুয়া। অন্য হিজড়াদের বলা হয় জেনানা। আর মানুষের হাতে সৃষ্ট বা ক্যাসট্রেড পুরুষদের বলা হয় চিন্নি।

সত্যিই যদি কেউ হিজড়া হয়ে থাকেন এটি তার কোনো দোষে নয়, প্রকৃতির নিয়মেই তা ঘটে। যেমনটি ঘটে থাকে একজন প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে। দীর্ঘ সময় ধরে সচেতনতা সৃষ্টির পর এখন দেশ ও বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে। তাদের সমাজের মূলস্রোতের অন্তর্ভূক্ত করতে নানারকম সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, হিজড়াদের কল্যাণে এ রকম কোনো কর্মসূচি খুব একটা দৃশ্যমান নয়। সমাজে এ জনগোষ্ঠী নিগৃহীত হয়। তাই তারা বিকৃত মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠে। পেটের তাগিদে জড়িয়ে পড়ে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড।

যৌন কদর্যতার মোঘল হারেমে বাংলা অঞ্চলের হিজড়াদের বেশ কদর ছিল। ইতিহাসে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এক সময় শহর গ্রামে বিনোদনের উৎসই ছিল হিজড়াদের নাচ। কোনো ঘরে শিশু জন্ম নিলেই সে বাড়িতে হিজড়া নাচ হতো। আর তা দেখার জন্য ভিড় জমাতো বাড়ির ছোট বড় সবাই। তবে, এখন আর এমনটা হয়না বললেই চলে। বরং শহরের রাস্তায়, গাড়িতে বেড়েছে তাদের চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য। কেউ বাধা দিলেই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মারধোর করার ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই । আর এদের নিয়ন্ত্রনকারী গুরু মায়েরা বলছেন, তাদের জানা মতে সংগঠনের কেউ চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নয়। তবে পুলিশ বলছে, তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। সীমা লঙ্ঘন করলেই নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

হিজড়া দৌরাত্মের সমাধান কী?

বাসে চাঁদা তুলছে হিজড়াদের একটি দল। ছবি : সংগৃহীত

ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাসে যাত্রীদের জিম্মি করে অর্থ আদায়, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নবজাতক শিশুদের জিম্মি করে অভিভাবকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নেওয়াসহ হিজড়াদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অনেক অভিযোগ।

হিজড়া দৌরাত্মের সমাধান কী?

নাগরিক দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছেন পথের হিজড়ারা, ছবি: সংগৃহীত

রাস্তাঘাটে হিজড়াদের হাতে প্রায়ই জিম্মি হন সাধারন মানুষ। তাদের টাকা না দিতে পারলে থাকে সন্মানহানীর ভয়। হিজড়াদের কাজে কেউ বাধা দিলে, গালিগালাজসহ নানাভাবে হেনস্তা হতে হয় তাকে। এছাড়া, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, প্রকাশ্যেই কাপড়-চোপড় খুলে ফেলছে হিজড়ারা। সাথে বিশেষ ভঙ্গিতে হাততালি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

হিজড়া দৌরাত্মের সমাধান কী?

রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে টাকা তুলছে হিজড়া ছবিঃ সংগৃহীত

একটি মানবাধিকার সংগঠনের সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি হিজড়া রয়েছে। এদের মধ্যে, রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছে একটি বড় অংশ। পুরান ঢাকার মাহুতটুলী, শ্যামপুর, চকবাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়াসহ ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে রীতিমতো ঘাঁটি গড়ে তুলেছেন হিজড়ারা ।

রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মহাখালী এলাকার গুরু মা খ্যাত মৌসুমি হিজড়া বিবিএস বাংলাকে বলেন, চাঁদাবাজি করা হিজড়ারা তাদের সংগঠনের নয়। তাদের মধ্যে কেউ এর সাথে জড়িত নয়। তাহলে রাস্তায় এরা কারা? এ প্রশ্নের জবাবে মৌসুমি বলেন, এদের মধ্যে কিছু ভারত থেকে এসে এখানে ঘাঁটি গড়ে চাঁদাবাজি করছে।

হিজড়া দৌরাত্মের সমাধান কী?

টাকা তোলায় ব্যাস্ত হিজড়া ছবিঃ সংগৃহীত

সাধারণত হিজড়াদের বাড়াবাড়ি নিয়ে কোনো মামলা বা জিডি করা হয় না। তার পরেও তাদের নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ আছে বলে জানায় পুলিশ। অনেক সময় পুলিশও এড়িয়ে যায় হিজড়াদের। কেননা প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। উপরন্তু, কখনও কোনো হিজড়াকে আটক করলে তাদের বাহিনীর সদস্যরা ছুটে আসে। এসময় তারা থানা ঘেরাও করে, ভাঙচুর চালায়, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। সে কারণে কেউ থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ মীমাংসা করে ফেলার পরামর্শ দেয়।

শহরবাসী অনেকে মনে করেন, পথেঘাটে টাকা তোলা হিজড়াদের অনেকেই আসলে হিজড়া নয়। তারা স্বাভাবিক নারী বা পুরুষ। কিন্তু টাকা তোলার জন্য এরা হিজড়া সেজে অভিনয় করে থাকে।

হিজড়া দৌরাত্মের সমাধান কী?

হিজড়াদের একটি দল, ছবিঃ সংগৃহীত

এ বিষয়ে গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো আবুল হাসান বলেন, হিজড়াদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ পাই। কোনো ধরনের গুরুতর অপরাধে এদের ছাড় দেয়া হবে না, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অনেক নাগরিক দূর্ভোগের এই ঢাকায় হিজড়াদের উপদ্রুপ কবে বন্ধ হবে?- এর উত্তর যেন কারও জানা নেই।

 

Advertisement
Share.

Leave A Reply