একটু নিভৃতেই কাজ করতে পছন্দ করেন সঞ্চালক, মডেল, অভিনেত্রী ও নির্মাতা আয়শা মনিকা। তবে দর্শক তাকে ঠিকই চেনেন, পছন্দ করেন, ভালোবাসেন। বলা যায়, তার রক্তেই আছে অভিনয় বা নির্মানের ক্ষিদে। তবে কখনও তিনি নিজেকে চেনাতে মরিয়া নন। কাজ করে যাচ্ছেন অনেকটা নিজের মত করেই।
ঠিক ১০ বছর পর তিনি ফিরছেন সঞ্চালনায়। অনুষ্ঠানের নামটিও অভিনব- ’১১ নম্বর গাড়ি’। হ্যাঁ, তিনি যে ‘শো’ টি সঞ্চালনা করবেন তার নাম এটিই।
২০১২ সালে সর্বশেষ তাকে সঞ্চালনায় দেখা গেছে আরটিভির স্টুডিও লাইভ কনসার্টে। এবার ফিরছেন নতুন চ্যানেল গ্রিন টিভি’র পর্দায়।
‘১১ নম্বর গাড়ি’ নামের বিশেষ এই শো সম্পর্কে আয়শা বলেন, ‘ এটি একেবারেই নতুন কনসেপ্ট। আমার ভালো লেগেছে এটি। শুধু এ কারনেই ১০ বছর পর ফের সঞ্চালনায় ফিরছি। শুটিংও শুরু হয়েছে। নতুন আমাকেই পাবেন দর্শকরা।’
নাম যেহেতু অভিনব, কনসেপ্ট অভিনব তো হবেই। এই শো কিন্তু আর দশটা শো থেকে একেবারেই ভিন্ন হবে। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে সঞ্চালনা করবেন সঞ্চালক। শুটিংও হচ্ছে গাড়ির ভেতরেই। বুঝতেই পারছেন নতুন কিছু নিয়েই হাজির হচ্ছেন আয়শা মনিকা। তবে অনুষ্ঠান সম্পর্কে এখনই পুরোটা খোলাসা করতে রাজি নন তিনি। অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করছেন নাহিন শফিক। ৩১ জুলাই থেকে প্রচারিত হওয়ার কথা।
শুধু যে সঞ্চালনাতেই আয়শা মনিকা দক্ষ তা কিন্তু নয়, তিনি অভিনয়ও করেছেন জনপ্রিয় অনেক নাটকে। বিশেষকরে একসময় গিয়াস উদ্দিন সেলিমের বেশকিছু নাটকে কাজ করে আলোচলায় আসেন তিনি। এই নির্মাতার অনেক নির্মাণে অভিনয় করেছেন আয়শা মনিকা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘অতঃপর’ যেখানে তিনি রেবেকা চরিত্রে অভিনয় করে বেশ আলোচিত হন। এছাড়াও ‘ওয়ারিশনামা’, ‘গৃহবধু সুন্দরী, লোভ, রোদ প্রভৃতি নাটকেও তিনি সমাদৃত হন। বিশেষকরে সেসময় বেশ দর্শকনন্দিত হয় নাটক “ওয়ারিশনামা’। এই নাটকে ডিওপি ছিলেন কামরুল হাসান খসরু। অভিনয়ের পাশাপাশি ক্যামেরার পেছনেও এই নির্মাতার সাথে কাজ করেছেন আয়শা মনিকা। এমনকি ‘ছায়াবৃক্ষের রাজকন্যা’ টেলিফিল্মে অভিনয় করে সেসময় সাড়া ফেলেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে হাসিবুর রেজা কল্লোলের ‘অন্ধ নিরাঙ্গম’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি নির্মাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে নির্মাণ করছেন তথ্যচিত্র ‘আসমা রহমান-একাত্তরের মুক্তি মা’। চলছে সেটির সম্পাদনার কাজ। দেশের ৮টি বিভাগে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেটি প্রদর্শন করতে চান। শুরু করবেন নিজের বিভাগ সিলেট দিয়েই। আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা জানাতে চান এই ডকুমেন্টারির মধ্য দিয়ে। এমনকি এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে আয়শা মনিকার।
এই ডকুমেন্টারি নিয়ে আয়শা বলেন, ‘একাত্তরের মা আসমা রহমান। তাকে নিয়ে এটি নির্মাণ করার কারণ, এই মানুষটির বড় অবদান আছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে। যা সেভাবে ফোকাসড করা হয়নি।’
এসবের পাশাপাশি তিনি কাজ করেছেন অনেক বিজ্ঞাপনেও। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রামীণফোন, ইউনিলিভার স্পিরিট অব রামাদান, ট্যাং, ডানো, বাংলালিংক, পুরনাভা, এসএমসি মনি মিক্স, নর, পিংক সিটি। নির্মাতা রেদওয়ান রনি নির্মিত একটি উল্লেখযোগ্য সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন ‘নর বাংলাদেশ-রমজানের মর্ম’। বিজ্ঞাপনটিতে মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন আয়শা মনিকা। এই বিজ্ঞাপনটি ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮২ বাবের বেশি শেয়ার হয়েছিলো। এমনকি এশিয়ার মধ্যে সেসময় বিজ্ঞাপনটি সবচেয়ে বেশিবার শেয়ার হয়েছিলো। এটি এতটাই আবেদন তৈরি করেছিলো যে এখনও ঈদের সময় শেয়ার হয়, সবাই আবার নতুন করে দেখেন বিজ্ঞাপনটি।
২০১৮ সালে আয়শা নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘ল্যাটেন্ট ড্রিম’, বাংলায় যা ‘সুপ্ত স্বপ্ন। এটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে, রেহানা সামদানির ‘হারিয়ে খুঁজি’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি অভিনয় জগতে আসেন। ২০০৯-২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি চ্যালেন আই, বাংলা ভিশন, এনটিভি, আরটিভিতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করেছেন। সেসময় আয়শা মনিকাকে বিভিন্ন মেগা কনসার্ট উপস্থাপনাতেও দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত আয়শা মনিকা কাজ করে যাচ্ছেন নিজের ছন্দেই, করতে চান আমৃত্যু।