fbpx

১১ ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ২৭ হাজার ৯১০ কোটি টাকা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

দিন বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এটি ছাড় দিতে সরকার নানা ধরনের ছাড়ও দিচ্ছে। কিন্ত কোনোভাবেই এটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। একই সঙ্গে মূলধন সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুণে আসছে অনেক শাখা। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি ১১টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সে‌প্টেম্বর শে‌ষে যে ১১টি ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৫টি, বিশেষায়িত খাতের দুটি ও বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। এছাড়াও রয়েছে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

এই ১১ ব্যাংকে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২৭ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। তিন মাস আগে এসব ব্যাংকে ঘাট‌তি ছিল ২৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকের আমানতের অর্থ থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদান করে। সেই ঋণ খারাপ (খেলাপি) হয়ে পড়লে আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত মুনাফা করতে না পারা ও লাগামহীন খেলাপি ঋণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ  করতে হয়। বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এর বাইরে আপদকালীন  সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে।

যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি, ওই ব্যাংককে তত বেশি মূলধন রাখতে হয়। চলতি বছরের নয় মাসে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা বেড়ে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এতে মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।

সে‌প্টেম্বর প্রা‌ন্তি‌কের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি সাত ব্যাংকে বর্তমানে ঘাটতি রয়েছে ২৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি আছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে, ১২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে আছে সোনালী ব্যাংক, ঘাট‌তি দুই হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে ২ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে ২ হাজার ৩৫৩ কোটি, রূপালী ১ হাজার ৬৭৬ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন  (রাকাব) ব্যাংক ১ হাজার ৫৪৩ কোটি এবং জনতা ব্যাংক ১ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। বেসরকারি  ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্সে ১ হাজার ১৪৩ কোটি, পদ্মা ব্যাংকে ৫৪০ কোটি ও এবি ব্যাংকে ৩৫৫ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই এবং এটা নিয়ে তারা উদ্বিগ্নও নয়। ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এক হয়ে গেছে, তারা খেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এছাড়া শীর্ষ ঋণ খেলাপিরা  সবাই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এছাড়া সরকারের তেমন সদিচ্ছাও নেই। যার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

‌তি‌নি জানান, নিয়ম অনুযায়ী খেলাপির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে মূলধন ঘাটতি‌তে প‌ড়ে‌ছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে এই হার বেশি। এর মূল কারণ এসব ব্যাংকে সুশাসনের অভাব। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

ঘাটতি কমাতে তাই খেলা‌পি ঋণ আদায়ে জোর দিতে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক‌কে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

Advertisement
Share.

Leave A Reply