fbpx

২১ আগস্ট; গ্রেনেড হামলার ১৭ বছর আজ

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

২১ আগস্ট, রক্তাক্ত বিভীষিকাময় একটি দিন। নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৭ বছর আজ।

১৭ বছর আগে আজকের এই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেঁপে উঠেছিল মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে। পুরো জাতি সেদিন স্তব্ধ হয়ে পড়ে ওই হামলায়।

২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে অতর্কিতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করা গেলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। আর আহত হন শেখ হাসিনাসহ পাঁচশ’রও বেশি নেতা-কর্মী এবং অনেক সাংবাদিক।

তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। ট্রাকমঞ্চের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য!

রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে সেদিন আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সৌভাগ্যক্রমে অলৌকিকভাবে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এমনকি, তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ ভেদ করতে পারেনি সেই টার্গেট করা গুলি।

শেখ হাসিনাকে হামলার পরপরই কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। রক্তাক্ত সেই ঘটনায় ১৬ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ জনে।

সেই হামলায় আওয়ামী লীগের চারশ’র বেশি নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তখন আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাও।

আওয়ামী লীগ বলছে, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ছিল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। ঘাতক চক্র মূলত ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে সংগঠনের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনটির কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এছাড়া, সকাল সাড়ে ১০টায় এ হামলার প্রতিবাদ ও নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করবেন এবং বক্তব্য দেবেন।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে সীমিত পরিসরে পালন করা হবে দিনটি। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত  কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply