fbpx

৬ কোটি টাকা বকেয়া, উধাও ৪১ প্রযোজক

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) থেকে ১৯৯৬-২০১১ সময়ে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন এমন ৪১ জন প্রযোজক এই ১৫ বছরে বিএফডিসির পাওনা প্রায় ৬ কোটি টাকা এখনো পরিশোধ করেননি। বিএফডিসির হিসাব শাখা থেকে পাওয়া এক নথিতেই এই তথ্য পাওয়া গেছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, বহু চেষ্টা করেও তারা এই প্রযোজকদের নাগাল পাচ্ছেন না। ওই ১৫ বছরে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর খরচবাবদ এই প্রযোজকরা ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৫ টাকা পরিশোধ করেননি।

এমনকি ছবিগুলো বিভিন্ন সময়ে সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পরও প্রযোজকরা তা আর মুক্তি দেননি।

বিএফডিসির হিসাব শাখার একজন কর্মকর্তা বলছেন, ‘আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ‘গাফিলতির’ কারণেই এই বকেয়া এতোদিনে আদায় করা যায়নি।’

বিএফডিসি বলছে, ৪১ জন চলচ্চিত্র প্রযোজককে বিভিন্ন সময়ে বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য তাদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য বিভিন্ন সময়ে চিঠি পাঠানো হলেও তাতে কোন সাড়া মেলেনি। এছাড়াও বেশ কিছু চিঠি এফডিসির ঠিকানায় ফেরত এসেছে। কারণ কয়েকজন প্রযোজক সঠিক ঠিকানা দেননি। ফলে তাদের কাছে পাওনা অর্থগুলো পাওয়ার আশা এখন অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।

হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে জ্যাম্বস ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ‘এ লড়াই  বাঁচার লড়াই’ ছবির। চলচ্চিত্রের প্রযোজক তাসনিম জাহান খানের কাছে ২০ লাখ ৫ হাজার ৮৮৪ টাকা পাবে এফডিসি। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালের জুলাই মাসে সেন্সরক ছাড়পত্র পায়।

আর সর্বনিম্ন ৬ লক্ষ ৬৯ হাজার ২৪০ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে রিয়া অভি চলচ্চিত্রের ব্যানারে নির্মিত ছবি ‘অন্তরে প্রেমের আগুন’ ছবির প্রযোজক ইদ্রিস চৌকিদারের কাছে। ছবিটি ২০০৮ সালের ১২ আগস্ট সেন্সর ছাড়পত্র পায়।

বিএফডিসির একটি সূত্র বলছে, এসব প্রযোজকরা যখন ছবি নির্মাণ করত সে সময় যে আগ্রহ নিয়ে এসেছিলেন, একটা সময় গিয়ে তারা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। যার কারণে একটা সময় গিয়ে তাদের মধ্যে সে ছবিটি নির্মাণ ও মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখাননি।

সূত্রটি বলছে, এ ছাড়া বেশ কয়েকজন প্রযোজক ছবির কাজ শেষ হওয়ার আগেই উধাও হয়ে গিয়েছেন। এরপর অনেকটা বিরতির পর সেই ছবিগুলোর পরিচালক কোনো রকমে ছবির কাজ শেষ করলেও ছবিগুলো মুক্তি পায়নি।

বিএফডিসির হিসাবরক্ষণ কমকর্তা হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা বহু চেষ্টা করেও এই বকেয়া অর্থের এক টাকাও আদায় করতে পারিনি। আমরা একটা সময় গিয়ে অর্থ পরিশোধে দীর্ঘ সূত্রতার কারণে দুই/তিনজন পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। কিন্তু তাও খুব একটা কাজে আসেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এমনও হয়েছে, কিছু প্রযোজক যে ঠিকানা দিয়েছেন সেটি সঠিক নয়। তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি। অর্থ আদায়ের জন্য আমাদের  তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

বকেয়া তালিকায় থাকা ছবির নামগুলো হলো-নুর জাহানের প্রেম (১৯৯৬), সজল প্রিয়া (১৯৯৬), সাদ্দাম বাদশা(১৯৯৭), যেমন কর্ম তেমন ফল (১৯৯৭), দুই ওস্তাদ (১৯৯৮), প্রেমের প্রতিশোধ (২০০৫), রশিক নাইয়া (২০০৫), কেন আমি সন্ত্রাসী (২০০৫), কাফেলা (২০০৬), বিদ্রোহী নারী (২০০৬), জাদরেল পুলিশ (২০০৬), ধ্বংস  লীলা(২০০৭), আখেরী আঘাত (২০০৭), পাচারকারী (২০০৭), অন্ধ গলির মাস্তান(২০০৭), দুর্ধষ রাজা (২০০৭), ভালোবাসার মানুষ (২০০৭), গর্জে ওঠা জনতা (২০০৭), মগজ ধোলাই (২০০৭), পিতার অহংকার (২০০৭), বাংলার ভাই (২০০৭)। আদরের ভাই(২০০৭), ফাঁসির আদেশ(২০০৮), চাঁন সরকার(২০০৮), ফাঁসি চাই(২০০৮), অপমানের জ্বালা(২০০৮), মায়ের আঘাত(২০০৮), রশিক নাইয়া(২০০৫), কেনো আমি সন্ত্রাসী(২০০৫), কাফেলা(২০০৬), মা আমার দেশ(২০০৬), ডাকু কাদিরা(২০০৬), ছলনাময়ী নারী(২০০৬), মন যা চায়(২০০৬), রাতের রানী মাস্তানের রাজা(২০০৬), গন্ডগোল (২০০৬), এ লড়াই বাঁচার লড়াই(২০০৬), লড়াকু সন্তান(২০০৬), কঠিন নারী(২০০৮), অন্তরে প্রেমের আগুন(২০০৮), এ দেশ তোমার আমার(২০০৯), এই জীবনে আছো তুমি(২০১১), তুমি আমার কে (২০১১)।

এদিকে বিএফডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেনের মেয়াদে এই বকেয়া অর্থ আদায়ের জন্য ৮ সদস্যের একটি নীতিনির্ধারণী বোর্ড গঠন করেছিলেন। কিন্ত তারা সেই বকেয়া আদায়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকও এই বকেয়া আদায়ে নতুন আরেকটি কমিটি গঠন করেছেন। সার্বিক বিষয়ে বিএফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, ‘এটি অনেক পুরনো একটি ইস্যু। আমাদের নতুন কমিটি কাজ করছে, অর্থ আদায়ের জন্য। দেখি কতটুকু কি করা যায়।’

Advertisement
Share.

Leave A Reply