fbpx

৭৫ টাকা বিনিয়োগ করে এখন লাখপতি আচারবুড়ি সামিরা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা। অনার্স পরীক্ষা দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ফলাফলের জন্য। জীবনে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন। যোগদান করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে।

কিন্ত মানুষ আসলে যেভাবে চায়, তা কখনও হয় না। সামিরার জীবনের ছকও ঠিক তেমনি মেলেনি। করোনা কারণে গোটা  বিশ্ব যখন নাকানিচুবুনি খাচ্ছে, বাংলাদেশের অবস্থাও তার ব্যতিক্রম ছিল না।  এই সময়ে তাই ঢাকায় নিজের টিকে থাকাটা  একটু কঠিনই হয়ে পড়ছিল সামিরার জন্য। আর বাসা থেকেও আসছিল চাপ। তাই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরে যান মায়ের কোলে।

বাড়িতে গিয়ে ভাবেন, এভাবেই কি স্বপ্নের অপমৃত্য ঘটবে তার? যেহেতু হিসাববিজ্ঞানে পড়েছেন, তাই মনের মাঝে সামিরার ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার সুপ্ত বাসনা ছিল। তাই এবার এ পথেই পা বাড়ালেন তিনি। বারবার ভাবতে লাগলেন, কীভাবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া যায়।

অনেক ভেবে দেখলেন, মায়ের কাছ থেকে একটি গুণ সে রপ্ত করছে পেরেছে। সেটি হলো আচার তৈরি করা। তাই কৌতুহল বসেই আমের আচার তৈরি করে ফেসবুকে এক পোস্ট দেন। ব্যস, প্রচুর সাড়া পান। এভাবেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার দ্বার  খুলে যায় নিজের সামনেই।

সামিরা বলেন, মাত্র ৭৫ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লেখাই। ফেসবুকে একটি পেজ খুলি। নাম দেই ছায়াবৃক্ষ ।  এরপর উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) নামের একটি উদ্যোক্তাদের যে গ্রুপটি আছে, সেখানে আস্তে আস্তে পোস্ট দেয়া শুরু করলাম। আর বেশ ভালো সাড়াও পেলাম। মাত্র ৬ মাসে সাড়ে ছয় লাখ টাকার আচার বিক্রি করেছি।

৭৫ টাকা বিনিয়োগ করে এখন লাখপতি আচারবুড়ি সামিরা

হরেক রকমের আচারের সমারহ আছে সামিরার ঝুলিতে

প্রথমদিক থেকে একদমই আনাড়ি ছিলেন। প্যাকেজিং থেকে শুরু করে ডেলিভারি প্রসেস সব মিলিয়ে বেশ হ্যাপা পোহাতে হয় সামিরাকে। তবে আস্তে আস্তে নিজের জায়গাটি দৃঢ় করেন বলেও আলাপচারিতায় সামিরা বলেন।

স্বপ্ন পূরণের ধাপ হিসেবে তিনি বলেন, এখন আমার নিজস্ব ট্রেড লাইসেন্স আছে, নিজস্ব কিছু মানুষ আছে। যাদের নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক দূর এগিয়ে যাবার। এরই মধ্যে বেশ কিছু ট্রেনিংও নিয়েছি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও জানান সামিরা। বলেন, ‘আচার দিয়ে শুরু করলেও আমার পরিকল্পনা অনেক বড়। ধীরে ধীরে অন্যান্য পণ্য নিয়েও কাজ করব। আমি চাই আমার ছায়াবৃক্ষ একদিন ব্র্যান্ড হবে। আমার তৈরি আচারের সুনাম যেনো গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর আমার এই উদ্যোগে অন্যদেরও শামিল করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।’

পাশাপাশি নারীদের পিছিয়ে না থেকে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান। বলেন, আমরা নারী, আমরাও পারি- এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে নারীদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমরা নারী কখনও পিছিয়ে থাকতে পারি না।

বাকিদের সঙ্গে অন্যদের প্রোডাক্টের মূল পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি কখনও প্রোডাক্টের মান নিয়ে কম্প্রোমাইজ করি না।

৭৫ টাকা বিনিয়োগ করে এখন লাখপতি আচারবুড়ি সামিরা

সামিরার সিগনেচার প্রোডাক্টের একটি

সামিরার ঝুলিতে আছে প্রায় ২২ রকমের আচার। গ্রিন ম্যাঙ্গো স্লাইস, গরুর মাংসের আচার এবং মুরগির মাংসের আচার আমার সিগনেচার আইটেম। এছাড়া রসুনের আচার, আমের টক-মিষ্টি মোরব্বাসহ আরও কয়েকটি পদও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তাঁর বানানো আচার কিনেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, তামিম ইকবালসহ আরও অনেকে। আচার খেয়ে তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন ফেসবুকে।

উদ্যোক্তা হতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ এবং সাহায্য পেয়েছেন মা-বাবা ও পরিবারের কাছ থেকে। তবে আশপাশের মানুষের সমালোচনাও ছিল। সমালোচনাকারীদের দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সামিরা হেঁটেছেন তার স্বপ্নপূরণের পথে। এখন তিনি ছায়াবৃক্ষের ছায়ায় নতুন পণ্য যুক্ত এবং কিছু মানুষের কর্মসংস্থান করার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত।

Advertisement
Share.

Leave A Reply