মাতৃগর্ভ ও পৃথিবীর প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। নবজাতকের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, পৃথিবীর প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়ানো। তাই, নবজাতকের যত্ন নিয়ে সবাই একটু বেশিই চিন্তিত থাকেন। আর শীতকালে এই চিন্তা আরো বেড়ে যায়। কারণ, এসময় জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগ একটু বেশি হয়ে থাকে। আর করোনার এই প্রকোপের কারণে তাই প্রয়োজন নবজাতকদের একটু বাড়তি যত্ন নেয়া।
সদ্যজাত শিশু থেকে জন্মের ২৮ দিন পর্যন্ত বয়সী শিশুকেই নবজাতক শিশু বলা হয়। এই ২৮ দিনের সময়টা নবজাতকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তখন তাদের বাড়তি যত্নের অংশ হিসেবে জন্মের পরপরই তাদেরকে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। যা শিশুর জন্য রোগ-প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করবে। আর তাতে শিশুর শরীরে তৈরি হবে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা।
একজন নবজাতক শিশুকে যতো বেশি সময় সম্ভব মায়ের কাছাকাছি রাখাটা জরুরি। কারণ, এতে করে শিশুটির চারপাশে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা তৈরি হবে। সাধারণত নবজাতকের শরীর খুব দ্রুত তাপমাত্রা হারায়, তাই শিশুর দেহ এসময় উষ্ণ রাখাটা জরুরি।
নবজাতকের গোসলের বিষয়টি খুব খেয়াল রাখতে হবে। জন্মের প্রথম সাতদিন গোসল না করানোই ভালো। আর সাত দিন পর থেকে কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতো করে গোসল করাতে হবে। তবে, শীতকালে গোসল দ্রুত শেষ করাতে হবে। আর গোসলের পরপরই সুতি কাপড় দিয়ে শিশুর শরীর মুছে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অলিভ অয়েল কিংবা লোশন ব্যবহার করা ভালো। শীতের আবহাওয়া শুষ্ক থাকে, আর শিশুর ত্বক যেন শুষ্ক হয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, শুষ্ক ত্বকে চর্মরোগ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই দিনে দুই থেকে তিনবার শিশুর শরীরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেকেই শিশুর ত্বকে সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু, নবজাতকের কোমল ত্বকের জন্য সরিষার তেল বেশ ক্ষতিকর।
শীতে সাধারণত চুলে খুশকি বেশি হয়ে থাকে। তাই নবজাতকের চুলের যত্নে একদিন পরপরই তাদের চুলে শ্যাম্পু করা উচিত। তাতে চুলে খুশকি হবার সম্ভাবনা থাকে না।
নবজাতককে পরিষ্কার রাখার বিষয়ে খুব সচেতন থাকতে হবে। তারা যখন তাদের পরিহিত কাপড় নোংরা করবে, তা সাথে সাথেই বদলে দিতে হবে। যদি শিশুকে ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয়, তাহলে র্যাশ যেন না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। র্যাশ যদি একান্তই হয়, তাহলে তা দূর করার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
নবজাতকের নাভি না পরে যাওয়া পর্যন্ত তাতে তেল বা পানি যেন না লাগে সে বিষয়েও খুব খেয়াল রাখতে হবে। আর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
সময় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সবক’টি টিকা শিশুকে দিতে হবে।
নবজাতকের মুখের খুব কাছাকাছি এসে আদর করা থেকে বিরত থাকতে হবে। করোনার এই সময়ে কেউ বাড়ির বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে নবজাতকের ঘরে যেন প্রবেশ না করে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ছোট্ট একটি প্রাণ আমাদের সবার জীবনে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। সেই আনন্দকে সবসময় আগলে রাখতেই বিশেষ করে শীতের এই মৌসুমে আমাদের অনেক বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত। আর তাই নবজাতককে একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।