৫ টাকায় ডাক্তার দেখানো ১০ টাকায় হাসপাতালে ভর্তির টিকেট, এ যেনো শায়েস্তা খাঁর আমলের গল্প…
গল্পের মতো মনে হলেও এটা সত্যি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস এন্ড ট্রেইনিং সেন্টারে এমন কম খরচে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে।
যেখানে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ব্যবসার জন্য রোগীকে নানানরকম হয়রানির অভিযোগ, সেখানে মোহাম্মদপুরের ফার্টিলিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফের উপস্থিতি নিশ্চিত করছে। খুব কম খরচে রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে পারেন। ব্যাথামুক্ত, নিরাপদ ও নরমাল ডেলিভারির জন্য রোল মডেল মোহাম্মদপুরের এই হাসপাতাল।
হাসপাতালটির চিকিৎসক ডা, নাসরিন সুলতানা রুমি বলেন, ‘আমরা একজন রোগীকে ভর্তি করার পর থেকে তাকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। গর্ভধারণের পর থেকে যারা চেকআপে আসেন, তাদেরকে নরমাল ডেলিভারির জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। প্রসূতি মায়েরা যেনো ব্যথা সহ্য করে নরমাল ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন, সে বিষয়ে আমরা প্রতিটা গর্ভবতী নারীকে বুঝিয়ে থাকি। আর যদি কেউ ব্যথা সহ্য করতে না পারেন, তবে তার জন্য ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থাও আছে।’
ব্যথামুক্ত ডেলিভারির বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রুমি বলেন, ‘সন্তান প্রসবের ব্যথা শুরুর আগেই যে আমরা ব্যথামুক্ত করার পদ্ধতি প্রয়োগ করি, তা কিন্তু না। একজন মায়ের সন্তান প্রসবের ব্যথা ওঠার পর যখন তার প্রসব পথ চার সেন্টিমিটার খুলে যায়, তখন আমরা রোগীর পিঠে একটি ইনজেকশন দেই। তাতে ব্যথাটা রোগী আর অনুভব করেন না। অনেকেই জানতে চান, ব্যথা না হলে সন্তান জন্ম নেয় কিভাবে। এই পদ্ধতিতে রোগী শুধু ব্যথাটাই অনুভব করেন না, কিন্তু নরমাল ডেলিভারির জন্য বাচ্চার মুভমেন্ট বা সবরকম প্রক্রিয়া একদম স্বাভাবিক থাকে। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে বাচ্চাটি কোনও কারণে আটকে গেলে ইন্সট্রুমেন্টাল ডেলিভারির পদ্ধতিতেও আমরা ডেলিভারি করাই। এর জন্য আমাদের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন।’
মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার রোগী আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নেন। ১০০ শয্যা বিশিষ্টি হলেও হাসপাতালে ভর্তি থাকেন প্রায় আড়াইগুন বেশি রোগী। মাত্র ৫০ জন চিকিৎসক নিয়ে এতো রোগীর সার্বিক সেবা নিশ্চিত করা কঠিন, তবু চেষ্টার কমতি নেই বলে জানালেন হাসপাতালটির পরিচালক।
পরিচালক ডা. মুনিরুজ্জামান সিদ্দিকী বিবিএস বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতালে একজন নারী ও শিশুর সেবার জন্য যা যা প্রয়োজন তা ২৪ ঘণ্টা নিশ্চিত করা হয়। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা যে ফি নেই, এতো কম আর কোথাও পাবেন না। নরমাল ডেলিভারি ও অপারেশন থিয়েটার ১০ সেকেন্ডের দূরত্ব। প্রসূতি মায়ের যেকোন জটিলতা দেখা দিক না কেনো, আমরা তাকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নরমাল ডেলিভারির রূম থেকে সিজারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে পারি। তাই মায়েদের কোন ভয় নেই। তারা শুধু আমাদের সাথে সহযোগীতা করবে।’
অস্বচ্ছল রোগীদের ক্ষেত্রেও সবরকমের সহযোগীতা করা হয় জানিয়ে পরিচালক ডা. মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই হাসপাতাল শুধু চিকিৎসা সেবাই নিশ্চিত করে না, দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ, খাবার ও কাপড়চোপড়ের ব্যবস্থা করে। এমনকি চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার টাকারও ব্যবস্থা করে হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকা সমাজসেবা অধিদপ্তর ফান্ড।’
মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি হাসপাতালে রোগীদের মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে একটি ডিজিটাল হেলথ কার্ড দেওয়া হয়। কোন রোগী প্রেসক্রিপশন হারিয়ে ফেললেও অসুবিধে নেই। ডিজিটাল কার্ডে রেকর্ড থাকবে রোগীর চিকিৎসার পূর্বাপর সমস্ত তথ্য।
ডেলিভারী ছাড়াও মোহাম্মদপুরের এই হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা, শিশুদের টিকাদান, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাসহ মা ও শিশুর যেকোন ধরণের চিকিৎসা নিশ্চিত করে থাকে।