আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) তথ্য বলছে, দেশের ২৬ শতাংশ কিশোরী ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতায় ভুগছে। এছাড়া স্কুলে ভর্তি হয়নি এমন শিশুদের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতায় ভুগছে। তবে এক দশক আগের তুলনায় ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতা ও ঘাটতির তীব্রভাব কমে এসেছে।
গতকাল আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) আয়োজিত ‘ইম্পরট্যান্স অব গোল্ডেন রাইস অ্যাজ এ চয়েস টু সাসটেইন ভিটামিন ‘এ’ সাফিসিয়েন্সি-লুকিং অ্যাট পভারটি অ্যান্ড আন্ডার নিউট্রিশন নেক্সাস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সেমিনারে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুকের সভাপতিত্বে অতিথির বক্তব্য রাখেন এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারি, আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সাত্তার মন্ডল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুত্ফুল হাসান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির, ইরি বাংলাদেশ কার্যালয়ের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হোমনাথ ভান্ডারী।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইরি বাংলাদেশের সাবেক কান্ট্রি প্রধান ড. নোয়েল মেগর। তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অগ্রগতি হয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল বিতরণ, পুষ্টি চাল ও পুষ্টি তেল কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি কমে এসেছে। সরকারের এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি গোল্ডেন রাইস হতে পারে ভুক্তভোগী জনগণের ভিটামিন ‘এ’র একটি স্থায়িত্বশীল উৎস এবং সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি চলতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ভিটামিন ‘এ’র একটি টেকসই উৎস হতে পারে গোল্ডেন রাইস। এ চাল ভিটামিন ‘এ’র অভাব পূরণে সরকারের পুষ্টিসংক্রান্ত চলমান বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্যতম কার্যকরী একটি উপায় হতে পারে। শুধু গোল্ডেন রাইস মানুষের গড় ভিটামিন ‘এ’র চাহিদা ৩০-৪০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। গোল্ডেন রাইসের ফলন ব্রি ধান২৯-এর ফলনের সমান। চাষ, সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ ও স্বাদ প্রচলিত ধান থেকে আলাদা নয়। এছাড়া ইনব্রিড ধান হওয়ায় যেকোনো কৃষক নিজেই এ ধান থেকে তাদের বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।
ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং খাদ্যনিরাপত্তার ওপর চাপের পরিপ্রেক্ষিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি মোকাবেলায় একাধিক হস্তক্ষেপ ও কৌশল নেয়ার সময় এসেছে। এ রকম একটি হস্তক্ষেপ হলো ভিটামিন ‘এ’ ফর্টিফাইড রাইস। গোল্ডেন রাইসের গবেষণার তথ্য নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার প্রয়োজন। জাতটি দ্রুত অবমুক্ত করা গেলে কৃষক এবং ভোক্তারা এটি খেতে পারবেন।
ড. হোমনাথ ভান্ডারী বলেন, চালভিত্তিক কৃষিখাদ্য ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল মানুষ এবং জনসংখ্যার দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য ইরি নিবেদিত। ইরি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। ইরি এবং ব্রি যৌথভাবে ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতি পূরণের বিকল্প হিসেবে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস তৈরি করেছে।