এবারের ঈদে টানা ৯ দিন ছুটিতে যাচ্ছে গোটা বাংলাদেশ। দীর্ঘ ছুটি কাটাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ছুটে যাবেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
এই মৌসুমে অন্তত ১০ লাখ পর্যটক এবার কক্সবাজার বেড়াতে যাবেন। শুধু তাই নয়, এরই মাঝে পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট, কটেজের ৬০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের আগেই অবশিষ্ট কক্ষগুলোও ভাড়া হয়ে যাবে বলে মনে করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
তারা জানান, এবার রুম ভাড়ায় বিশেষ কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত চাপের অজুহাতে পর্যটকের কাছ থেকে যেন বেশি ভাড়া আদায় না করা হয়, সে বিষয়ে তৎপর থাকবেন জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত ও হোটেলমালিকদের পৃথক পর্যবেক্ষক দল।
ঈদের পরদিন থেকে টানা সাত দিন পর্যটকের সমাগম থাকবে এই সৈকতে। এ সময় হোটেল, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা হবে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার, এমনটি জানান হোটেলমালিকরা।
কক্সবাজার শহরের সাতটি পৃথক হোটেল ও রেস্তোরাঁমালিকদের সংগঠনের সমন্বিত মোর্চা ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ ১৬ দিনে সৈকতে সমাগম হয়েছিল অন্তত ১৫ লাখ পর্যটকের। এরপর উল্লেখযোগ্য হারে পর্যটকের তেমন সমাগম ঘটেনি। এবারের ঈদের ৭ দিনের ছুটিতে ১৫ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ থাকায় ১০ লাখ পর্যটক আসতে পারেন।
ইতিমধ্যে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে সাজসজ্জা ও সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। সৈকতের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসে দৈনিক ১ লাখ ৬০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে।
কক্সবাজারে প্রসিদ্ধ হোটলগুলোর মধ্যে হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সায়মন বিচ রিসোর্ট, হোটেল লংবিচ, হোটেল কক্স টুডে, হোটেল কল্লোল, হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালসহ আশপাশের ৫০টির বেশি হোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ ও রিসোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
তবে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে সোচ্চার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান।
তিনি বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে প্রতিটি হোটেলে কক্ষভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। অতিরিক্ত কক্ষভাড়া আদায় করা হলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সেবাকেন্দ্রে অভিযোগ করা যাবে। পর্যটকেরা গাড়ি থেকে নামলেই কিছু দালাল লোভনীয় অফার দিয়ে পর্যটকদের চিহ্নিত কিছু রিসোর্ট ও গেস্টহাউসে নিয়ে প্রতারণা কিংবা অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়। কিছু ইজিবাইক ও টমটমচালক যাত্রীদের গাড়িতে তুলে প্রতারণা করে। এদের ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে। পর্যটকেরা নিজেরা হোটেল রিসোর্টে গিয়ে কক্ষভাড়া নিলে তাদের সুবিধা হবে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুহিউদ্দিন বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ধ্যার পর পর্যটকেরা যেন অন্ধকারে ডুবে থাকা সৈকতের তীরের ঝাউবাগানের ভেতরে একাকী কিংবা তিন চাকার যান নিয়ে একাকী মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণে না যান, এ ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। এসব এলাকায় কৌশলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোর সুযোগ থাকে।