fbpx

একজন খোকন নন্দী: মরণের পরে, সম্পদের তরে!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

খোকন নন্দী, খোকন চৌধুরী, রাজীব চৌধুরী… নামের মতই জট লেগেছে মরোনত্তোর জীবনে। চিতা নাকি কবর, আট বছরেও হয়নি সমাধান। হাইকোর্টের আদেশের অপেক্ষায় মর্গে থাকা খোকনের মরদেহ। চীর ঘুমে অশান্তির মূলে ধর্ম পরিচয় আর সম্পদ।

খোকন নন্দীর প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দী, দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা আক্তার খানম। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক হাবিবা আক্তারের দাবি, বিয়ের চার বছর আগে ১৯৮০ সালে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এফিডেভিট করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন খোকন চৌধুরী ওরফে রাজীব চৌধুরী।

হাবিবা আক্তার বিবিএস বাংলাকে বলেন, ‘ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামার স্বাক্ষর করেই উনি মুসলমান হয়েছিলেন। আমি তার মুসলমান ওয়াইফ। সে মুসলমান। আমি তাকে মুসলমান রীতি অনুযায়ী কবর দিতে চাই।’

২০১৪ সালের ২৬ জুন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ৭০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় খোকনের। মরদেহ নিয়ে শুরু হয় হিন্দু মুসলিম দুই স্ত্রীর লড়াই। মরদেহের মালিকানা পেলেই হাতে আসবে খোকনের রেখে যাওয়া সম্পদ।

খোকন নন্দীর সম্পদের মধ্যে অন্যতম রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ক্যাপিটাল মার্কেট। বর্তমানে যেটির আয় দিয়ে সংসার চলছে প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানদের। সম্পত্তি কাউকে লিখে না দেওয়ায় অংশীদারির জন্য আবেদন করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা খানম।

এ বিষয়ে হাবিবা বলেন, ‘আমিতো কোন অন্যায় করি নাই। মুসলমান হিসেবে সেক্রিফাইস করতে চেয়েছিলাম। সম্পত্তির জায়গা জমি পেতাম, কিন্তু আমিতো সেই লোভও করিনি। আমার বড় পাওয়া ছিল যে আমি তাকে মুসলমান করতে পেরেছি।’

খোকন নন্দীর ভাই বাবুল নন্দী বলেন, ‘আইনের উপর আস্থা রাখতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে। এটার ওপর কোন ওজর আপত্তি আমাদের নাই। সবকিছু জেনেশুনে আদালত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।’

খোকন নন্দীর নামে ক্যাপিটাল মার্কেট রেজিস্ট্রেশন হয় ২০০৪ সালে। কিন্তু তারও ২৪ বছর আগে মুসলমান হন খোকন। তাহলে খোকন নন্দী নামেই কেন রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল দলিল? এই যুক্তি ধরে ধর্মান্তরিত হবার দলিলটিকেই জাল দাবী করছেন খোকনের ভাই বাবুল নন্দী।

বাবুল নন্দী বলেন, ‘উনি আনএক্সপেকটেডলি (অপ্রত্যাশিতভাবে) একটা জিনিস দাঁড় করিয়েছেন। সেটার সত্যি মিথ্যা কত কি, সেটা কোর্ট সিদ্ধান্ত নিবে। আমি মৌখিকভাবে বললে তো হবে না। কোর্ট সব যাচাই বাছাই করে, সবকিছু দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নিবে, আমরাও অপেক্ষায় আছি।’

এ প্রসঙ্গে খোকন নন্দীর দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা বলেন, ‘রায়টা চাচ্ছে না কেন তারা? রায়টা যে পক্ষে যাবে, যাবে। আমি যেমন বলি, এখান থেকে আমি নিস্তার পেতে চাই। যা হবে, হবে। শেষ হয়ে যাক, এখনকার এই পর্বটা শেষ হয়ে যাক।’

মৃত্যুর ৪ মাস পর ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে বারডেম হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে জায়গা হয় খোকন নন্দীর মরদেহের। মুসলিম স্ত্রী হাবীবা মাঝে মাঝে মরদেহ দেখতে গেলেও প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দী যাননি একবারও। লাশ আর আগের মতো নেই। শুকিয়ে যাচ্ছে। রাখার জায়গারও সংকট।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. কাজী গোলাম মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আট বছর একটি লাশ মর্গে থাকলে সেটি কিছুটা পরিবর্তন আসবে, এটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ফ্রিজের একটি অংশ দখল করে রাখায় আমাদের কাছে সেটা বাড়তি চাপ। সমস্যাটির দ্রুত সমাধান হলে মর্গের ফ্রিজের জায়গা কিছুটা খালি হবে। অন্য লাশকেও জায়গা দিতে পারবো।’

ঢামেক মর্গের ইনচার্জ সেকান্দার আলী জানান, ‘পাঁচটি ফ্রিজের দুটি নষ্ট। তাছাড়া ঘনঘন বিদ্যুত চলে যায়। দীর্ঘদিন লাশ মর্গে রাখা খুব কঠিন। লাশ শুকিয়ে যায়। আমরা অন্য লাশের জায়গা দিতে পারি না।’

নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত। বছর কেটেছে আট। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত সমাধানের পরামর্শ আইনজীবীদের।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এ ঘটনায় তার মতামত প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা, অস্বস্তিকরও। দুই পক্ষই যদি আদালতের কাছে দ্রুত সমাধানের আবেদন করেন, তাহলে আদালত খুব দ্রুত বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেবেন। এভাবে একেক পক্ষ থেকে সময় চেয়ে স্টে অর্ডার চাইতে থাকলে, শুধু সময়ই যাবে, সমস্যার সমাধান আর হবে না। তাই এটি সমাধানে উভয়পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে।’

সব ধর্মেই দ্রুত লাশ সৎকারের নির্দেশ দেয়া আছে। সম্পদের লোভে ধর্মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর উদাহরণ সমাজে ভুরি ভুরি। মানবিক আর ধর্মীয় মুল্যবোধের সঠিক শিক্ষা ছাড়া এই ধরনের সমস্যা সমাধানের পথ নেই, বলছেন আইনজীবীরা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply