প্রিয় সন্তান আয়মানকে কেড়ে নিয়েছে ক্যান্সার। মায়ের চোখে এখনও ছবির আড়ালে ভেসে ওঠে ছোট্ট আয়মানের প্রাণবন্ত মুখ।
চোখের সামনে সন্তানকে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখেছেন সায়মা সাফীজ সুমী। তাকে বাঁচাতে ছুটেছেন হাসপাতালে- হাসপাতালে। পাশে পেয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি, মারা যায় আয়মান। এরপরই বদলে যায় মায়ের জীবন। ক্যান্সার রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি, শারীরিক কষ্টের থেকে মানসিক কষ্ট আসলে অনেক বেশি। মানসিক স্বস্তির জায়গাটা ইয়োগা, মেডিটেশন আপনাকে অনেত দিতে পারে। আমি আসলে নিজে যখন স্বস্তি পেলাম, তখন ভাবলাম মানুষের জন্য কেন নয়? তারপ ২০১৯ সালে ইয়োগার ওপর টিচারর্চশিপ নিলাম। ভারতের বেঙ্গালুর থেকে পড়ে আসলাম। ক্যান্সার রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যটাও খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। মনবল যদি শক্তিশালী থাকে তাহলে অনেক জটিল সময়ও সহজে পাড় করা যায়।’
তিনি জানান, শুধু টাকা পয়সা নয়, মানসিক , শারীরিক ও নানান রকম সচেতনতার মধ্যে দিয়েই রোগী ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো যায়। বলেন, ‘এইখানে আসলে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার অপশন আছে। রোগ ধরা পড়ার পরে তার মানসিক প্রস্তুতি তৈরি করা। সে চিকিৎসায় যাবে কি যাবে না? এখানে বড় একটা আর্থিক বিষয় থাকে, সামাজিক অবস্থান থাকে। বিভিন্ন তথ্য লাগে। সে কোথায় চিকিৎসা করবে? কোন জায়গাটায় করলে সে বেস্ট চিকিৎসাটা পাবে? -সেটা দেশে হতে পারে, বিদেশে হতে পারে সামর্থ অনুযায়ী। সেই জায়গাটায় সাহায্য করা যায়। ভিসা, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে তথ্য দেয়া যায়। চিকিৎসা করতে ইন্ডিয়া বা থাইল্যান্ড গেলে সেখানে রক্তের যোগান দেয়ার একটি বিষয় থাকে। সেই ক্ষেত্রেও আমাদের করণীয় আছে। যেহেতু আমরা ওখানে চিকিৎসা নিয়েছি। আমাদের ওখানে কিছু স্বেচ্চাসেবীও রয়েছে। এছাড়া কোন জায়গাটায় কম খরচে থাকা যাবে এসব তথ্য দরকার হয়।’
প্রশান্তি নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সায়মা সাফীজ সুমী। সেখানে যোগব্যায়ম ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার রোগী, রোগীর পরিবারসহ যেকোনো সমস্যায় থাকা মানুষের মনে স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি রোগীদের সাহস যোগাতে, ও তাদের সাথে একাত্ম হতে নিজের চুল ফেলে দেন।
বলেন, ‘ক্যান্সার হাসপাতালে দেখলাম, চুল না থাকলে আমরা আসলে সবাই একই রকম দেখতে। ওদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো বলেন বা সাহস দেখানোর জন্য বলেন নিজের চুলটা ফেলে দিয়েছি।’
ক্যান্সার আক্রন্তদের নিয়ে লিখেছেন বই ‘ওরা নেই ওরা আছে’।
আয়মান ছাড়াও জন্মের নয়দিনের মাথায় আরও এক সন্তানকে হারিয়েছেন এই মা। রয়েছে একটি মেয়ে। দুই সন্তান হারানো কষ্টে একটু স্বস্তি আসে, যখন অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
সায়মা সাফীজ সুমী বলেন, ‘একটা রোগী চলে যাওয়ার পরেও তার পরিবার যেন স্বজনের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেন, তা নিয়েও কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন- ‘স্বজন হারানো পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেও তারা একটা শক্তি পান যে তারা একা নন।’
https://www.facebook.com/bbsbangla.news/videos/345119257583268