শত পাঠকের জ্ঞানের আলোর উৎস টাঙ্গাইলের চৌরাকররা গ্রামের ‘বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার’। প্রায় এক যুগ ধরে এই বাতি আলো ছড়াচ্ছে গ্রামের ঘরে ঘরে। ২০১০ সালে পাঠাগারটি গড়ে তোলেন পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সোহাগ।
ছোট বেলা থেকেই বই পড়তে ভীষণ ভালবাসতেন তিনি। এ গাঁয়ে তখন, সহজে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোনো বই মিলত না। যেতে হত অন্যগ্রামের বন্ধুদের কাছে। সেই থেকেই ইচ্ছে, একটি পাঠাগার গড়ে তোলার। বিবিএস বাংলাকে কামরুজ্জামান বলেন, ‘ শহরে অনেক সুযোগ আছে, অনেক লাইব্রেরি থাকে। সেই তুলনায় গ্রামে সুযোগ কম। তাদেরকে সুযোগটা তৈরি করে দেয়ার জন্য, বই পড়তে আগ্রহী করার জন্যই মুলত এই প্রচেষ্টা।’
শুরুটা সহজ ছিল না। ভাল কাজের জন্যও মুখোমুখি হতে হয়েছে বাধার। তবে তীব্র সমালোচনার মুখেও নিজের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেলেন সোহাগ। তিনি বলেন, ‘ প্রথম দিকে আসলে তেমন সাড়া পাইনি। বিভিন্ন ভাবে মানুষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইছেন। এমনও বলছে, বই পুড়িয়ে ফেলছে আমার। কিন্তু আজ দেখছি, যেই লোক বলেছিল বই পুড়িয়ে ফেলবে, সেই এখন পাঠাগারের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।’
বন্ধুবান্ধব ও ব্যক্তিগত সংগ্রহের একশটি বই নিয়ে, নিজের বাড়ির একটি কক্ষেই পাঠাগারটি চালু করেছিলেন কামরুজ্জামান। এখন বইয়ের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। নিয়মিত সদস্য সংখ্যাও শতাধিক। পাঠকরা এখানে এসে তো পড়ছেনই, আবার বাড়িও নিয়ে যেতে পারছেন বই।
কামরুজ্জামান জানান, বই পড়ার পাশিপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠ সংস্কৃতি চর্চা করতে পারেন, সে জন্যও রয়েছে বিভিন্ন কার্যক্রম। আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
বাতিঘরের দেখভালের ভার এখন পাঠাকরাও নিচ্ছেন। সব বয়সের পাঠকরাই ছুটে আসছেন আলোর ঘরে।
বাতিঘর দিন দিনই দেশ বিদেশের বইয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, হবে নিজস্ব একটি ভবন – স্বপ্ন দেখছেন কামরুজ্জামার সোহাগ। সেই সাথে দেশের প্রতিটি গ্রামে যেন অন্তত একটি পাঠাগার গড়ে তোলা হয়, কর্তৃপক্ষকে সেই আহ্বানও জানান এই তরুণ।