fbpx

ভোলায় হাঁস পালনে আগ্রহ বাড়ছে

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ভোলা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খামার পদ্ধতিতে হাঁস পালনে বদলেছে বহু মানুষের ভাগ্য। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই এ দিকে ঝুঁকছেন।

বিশেষ করে চরাঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে হাঁস পালন ব্যাপক সম্প্রসারণ লাভ করেছে। জেলায় ১৫ হাজারের বেশি পরিবার হাঁস পালনকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

জানা যায়, জেলার গ্রামে গ্রামে মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটাতে যুগ যুগ ধরে পারিবারিকভাবে হাঁস পালন হয়ে আসছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে স্থানীয়ভাবে মাংসের প্রচুর চাহিদা থাকায় দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের খামার গড়ে উঠতে শুরু করে।

বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে প্রচুর বিলাঞ্চল ও সমতল জমি থাকায় হাঁস প্রতিপালন অনেকটাই সহজ। চারদিকে নদী-খাল-বিল থাকায় প্রচুর শামুকসহ প্রাকৃতিক খাবার পাওয়া যায় এখানে। যা হাঁসের প্রধান খাদ্য। চরের মাঠে-ঘাটে দল বেঁধে ছুটে চলে শত শত হাঁস।

এর মাধ্যমে দারিদ্র্যতাকে জয় করে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে বহু পরিবার। চরগুলোতে সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শত শত হাঁসের খামার। এসব খামারে উৎপাদিত ডিম গ্রামের হাট-বাজার হয়ে চলে যায় শহুরে দোকানগুলোতে। এছাড়া হাঁসের ডিম দেয়া শেষ হলে মাংসের জন্য বিক্রি হয় বিভিন্ন বাজারে। এসময় হাঁসের মাংসের কেজি ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকায় বিক্রি হয়।

সরেজমিনে উপজেলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল চটকিমারায় গিয়ে দেখা যায়, ধান ক্ষেত থেকে শুরু করে নদী-খাল-নালা-ডোবায় শত শত হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা মূলত প্রাকৃতিক খাবার বেশি খায়। মাঝে মাঝে খামারিরা ধান ছিটিয়ে দিচ্ছে। কথা হয় স্থানীয় খামারি ইউছুফ ফরাজী ও ছাদেক আলীর সাথে। তারা জানান, ৫ বছর আগে ২’শ হাঁস দিয়ে খামার শুরু করেন তারা। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাদের। বর্তমানে প্রায় ৮’শ হাঁস রয়েছে তাদের খামারে। দৈনিক সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ৩ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকে ডিম বিক্রি করে।

হাঁস খামারী মো: আলাউদ্দিন মিয়া জানান, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঁস পালন করে আসছেন। বসত ঘরের পাশের জমিতে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। প্রথমে ১’শ হাঁস দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার প্রায় ৬’শ হাঁস রয়েছে। দৈনিক প্রায় ৪’শ ডিম হয় তার খামারে। ১’শ ডিম ১ হাজার টাকা মূল্য হারে তার ৪হাজার টাকার ডিম বিক্রি হয় দৈনিক। অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে তার ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভ হয়।

শুধু চর চটকিমারা নয়, ভেলুমিয়া চর, কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর, ভেদুরীয়ার চর গাজী, ধনীয়া, রাজাপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চরে হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হাঁসের খামারে কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশ গ্রহণ করছে।
মাঝের চরের খামারি জোছনা বেগম জানান, তার স্বামী কৃষি কাজ করেন। তার খামারে ৫’শ হাঁস রয়েছে। তিনি ছেলেকে নিয়ে খামার পরিচালনা করেন। হাঁস পালনে তেমন পরিশ্রম হয়না জানিয়ে বলেন, সকালে এসব হাঁস তার ছেলে বিল ও নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে দলবদ্ধ ভাবে শামুক, ছোটমাছসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খামার খায় তারা। সন্ধ্যার আগে আবার খামারে নিয়ে আসা হয়। তারপরেও দিনে ২বার করে তাদের খাবার হিসেবে ধান দিতে হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল জানান, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫ হাজারের অধিক খামারে ২৪ লক্ষ ৪১ হাজার হাঁস রয়েছে। একটি উন্নত জাতের হাঁস বছরে আড়াই’শ থেকে পৌনে ৩’শ ডিম দেয়। এসব খামারিদের সাথে উঠোন বৈঠক, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও প্রচার পত্র বিলি ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। বহু যুবক হাঁস পালনের মাধ্যমে তাদের বেকারত্ব দূর করছে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply