fbpx

রহস্যে বন্দি ‘শনিবার বিকেল’, বাড়ছে নির্মাতার হতাশা!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

আজকে সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেলো, এরকম কত সকাল যে আমার গেছে… এভাবেই মন খারাপ করা সকালের অনুভূতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্ত করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

কথায় আছে, শিল্পের নাকি কোনো সীমারেখা নেই, কোনো যুক্তিতে তাকে আটকে রাখা যায় না, কিন্তু দেশের সিনেমা যখন সেন্সরে আটকে রাখা হয় বিভিন্ন অযুহাতে তখন প্রশ্ন ওঠেই, শিল্পের ঠিক কতটা সীমারেখা টেনে দিতে পারে রাষ্ট্র?

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মত এমন মন খারাপ করা সকাল আসে আরো অনেকেরই। দিনের পর দিন সেন্সর বোর্ডে স্বপ্নের, পরিশ্রমের সিনেমা যখন আটকে থাকে তখন শিল্পী ঠিক কতটা স্বাধীনভাবে নিজের শিল্প চর্চা করতে পারেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সিনেমার সেন্সরশীপ না দেওয়া, এই বিষয়টা শুধু ‘একজন’ নির্মাতারই সমস্যা নয়, এটা দেশের সিনেমার জন্য হুমকি অর্থাৎ প্রত্যেক নির্মাতার জন্য হুমকী। অথচ ‘শনিবার বিকেল’ এর সেন্সরশীপ না দেওয়া নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না। কয়েকজন নির্মাতা বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কথা বললেও সেটা পর্যাপ্ত কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এমনকি পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকেও কোনো ধরণের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

অন্যরা যদি ভাবে এ সমস্যা শুধুমাত্র ফারুকির, তাহলে তারা বোকার রাজ্যে বাস করছেন, একজনের উপর খড়গ নেমে আসা মানে অন্যদের জন্য রাস্তা বন্ধ হওয়ার আগাম হুমকী নয় কি?

শুধু ‘শনিবার বিকেল’ নয়, এমন আরও বেশকিছু সিনেমা আটকে আছে সেন্সরে। ‘রানাপ্লাজার ঘটনা নিয়ে নির্মিত নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানাপ্লাজা’ সিনেমাটিও অপেক্ষায় আছে সেন্সরশীপের। এছাড়াও নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝরের ‘নমুনা’ সিনেমাটি আটকে আছে।

২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা অবলম্বনে নির্মিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ বা ‘স্যাটার ডে আফটারনুন’ যদিও নির্মাতার মতে সিনেমাটি কোনো বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয় বরং ঘটনা থেকে উৎসাহিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

রহস্যে বন্দি ‘শনিবার বিকেল’, বাড়ছে নির্মাতার হতাশা!

‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার একটি দৃশ্যে ইরেশ যাকের ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

দেশে মুক্তি না পেলেও এরই মধ্যে ‘শনিবার বিকেল’ দেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফিল্ম ফেস্টে দেখানো হয়েছে। এমনকি মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দুটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট জুরি পুরস্কারও পেয়েছে। এছাড়াও সিডনি ফিল্ম ফেস্ট, মিউলিখ ফিল্ম ফেস্টে প্রদর্শিত হয়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে।

২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে সিনেমাটির মহড়ায় অংশ নেন অভিনয়শিল্পীরা। মহড়া শেষে গত বছরের ৫ জানুয়ারি ঢাকার কোক স্টুডিওতে ‘শনিবার বিকেল’ ছবির শুটিং শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে এই সিনেমা প্রযোজনা করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ছবিয়াল, আরও আছেন ভারতের শ্যাম সুন্দর দে।

সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিভিন্ন দেশের অভিনয়শিল্পী। তাদের মধ্যে আছেন প্যালেস্টাইনের ইয়াদ হুরানি, পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। বাংলাদেশ থেকে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশিদ, ইরেশ যাকেরসহ অনেকে।

ফারুকী অনেক সময় বলেছেন, এটি তার স্বপ্নের সিনেমা। দেশের বাইরে বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টে সিনেমাটি দেখানো হয়েছে, অথচ দেশের সিনেমা দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে না।

রহস্যে বন্দি ‘শনিবার বিকেল’, বাড়ছে নির্মাতার হতাশা!

দেশের বাইরে বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টে দেখানো হয়েছে সিনেমাটি। পেয়েছে পুরস্কারও। ছবি: সংগৃহীত

তাইতো ফারুকীর কণ্ঠে হতাশা ঝরে পড়েছে ঠিক এভাবেই, ‘আমিতো চিরকাল সেইসব গল্পই বলে আসছি যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়, সেটা প্রেমের গল্পই হোক আর রাজনীতির গল্পই হোক। আমি তো অন্য কিছু পারি না। তাহলে পাখি সব যে রব করবে, সেটা কি নতুন সুরে করতে হবে? নতুন সুর শিখতে হবে?

ফারুকির এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? আমাদেরও তো সেই একই প্রশ্ন!

Advertisement
Share.

Leave A Reply