মহামারী প্রতিরোধে ভ্যাকসিন এসেছে দেশে। সত্যিই উদযাপনের এ ক্ষণ। বয়স্ক বা তরুণ অনেকের নতুন গন্তব্য এখন ভ্যাকসিন সেন্টার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক মানুষের করোনা টিকা নেয়ার ছবি ভেসে আসছে। এ তো গেল মধ্যবিত্তের বার্তা। কিন্তু প্রশ্ন ছিল, শহরের নিন্মবিত্ত মানুষের কাছে এ ভ্যাকসিন কতটা পৌঁছেছে? সব সংশয় কাটিয়ে এ উদ্বেগের উত্তর মিলেছে। সুখবর হলো, এবার রাজধানীর সব ওয়ার্ডে করোনা টিকা নিবন্ধন বুথ স্থাপন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বস্তিবাসীদের করোনা টিকার আওতায় আনার জন্য রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে করোনা টিকা নিবন্ধন বুথ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত এক মাসের অভিজ্ঞতায় উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আগ্রহ থাকলেও নিম্নবিত্তরা অপেক্ষাকৃত কম টিকার আওতায় আসার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান নীতিনির্ধারকরা। একই সঙ্গে আন্ত:যোগাযোগ ও প্রচার বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণটিকার উদ্দেশ্য পূরণ করতেই সব শ্রেণির মানুষকে এর আওতায় আনার বিকল্প নেই।
অনেকের অভিযোগ, রাজধানীর প্রায় সব কোভিড টিকাদান কেন্দ্রেই দেখা গেছে যথেষ্ট ভিড়। আগ্রহীদের চাপে অনেক ক্ষেত্রে নিবন্ধনের পর টিকা নিতে এসএমএস পেতেও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বেশ কয়েক দিন।
এছাড়া রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের বেলায় সে চিত্রটা একেবারেই বিপরীত। তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এসব মানুষ জানে না ঠিক কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে কিংবা টিকা পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের নেই স্বচ্ছ কোনও ধারণা।
তাই নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সচেতনতা বাড়াতে ও সবার জন্য নিবন্ধন সহজ করতে প্রতি ওয়ার্ডে বুথ তৈরির অনুরোধ জানানো হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের। এর ফলে, সবাই টিকা নিতে আগ্রহী হবেন বলেও মনে করেন তারা।
কোভিড টিকাদান ও প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে অনুরোধ করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় নিবন্ধন বুথ করবেন। প্রশিক্ষিত যারা আছেন তারা সেখানে টিকা দেবেন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণটিকাদান কর্মসূচির প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ করতেই প্রয়োজন সব শ্রেণির মানুষকে টিকার আওতায় আনা। আর সে কারণে নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে পৌঁছে দিতে হবে মানুষের দোরগোড়ায়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘টার্গেট পূরণ করতে হলে যোগাযোগ বাড়াতে হবে, উঠোন বৈঠক এবং আমাদের সরকারি ও এনজিও স্বাস্থ্যকর্মীরা যারা আছেন তাদের খুব বড় করে যুক্ত করতে হবে। নিবন্ধনের সময় টিকা নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে দুটো কাজই হবে।’ সবাইকে টিকার আওতায় আনতে কেন্দ্র বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।