কথায় আছে না, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। সেই উপায় অনুযায়ী কাজ হোর তাড়াতাড়ি বা দেরি, তাতে কার কি এসে যায়। দিন শেষে নিজের ইচ্ছে পূরণই মুখ্য বিষয়। অনেকেই আবার সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য আলাদিনের চেরাগ পেতে যুগের পর যুগ কাটিয়ে দেন। শেষমেশ চেরাগ ছাড়াই জীবন পার করে দেন। আর ইচ্ছে থেকে যায় অধরাই।
তবে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর নিবাসী সাইফুল ইসলাম কিন্ত নিজের ইচ্ছে পূরণ করেছেন। তবে তা ১৭ বছর পর। জানতে চান, কি ইচ্ছে ছিল তার?
সাইফুলের ইচ্ছে ছিল, একশ বরযাত্রী নিয়ে ধুমধাম করে পছন্দের মানুষ হেলেনা খাতুনকে বিয়ে করা। কিন্ত ইচ্ছে থাকলেই তো আর হয় না, তা পূরণের সামর্থ্য ও লাগে। ১৭ বছর আগে সেই সামর্থ্য ছিল না সাইফুলের। তাই কোনোমতে বিয়ে সেরে নিয়েছিলেন। তবে দমে যান নি নিজের ইচ্ছের কাছে। তাই ১৭ বছর পর সেই শখ পূরণ করলেন সাইফুল।
শুক্রবার বিয়ের প্রায় ১৭ বছর পর শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তিনি। বরযাত্রীদের মধ্যে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের পাশাপাশি তাদের সন্তানেরাও ছিলেন। গানবাজনার তালে বরযাত্রীরা পুরো গ্রাম ঘুরেছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইচ্ছা পূরণ করতে ১৭ বছর পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলাম। আমাদের ১০ বছর বয়সের ছেলে ও ৭ বছর বয়সের মেয়েও অনুষ্ঠানে ছিল। বরযাত্রী নিয়ে গানবাজনা করে সাত গ্রাম ঘুরেছি।’
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ও হেলেনার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রায় ১৭ বছর আগে গ্রামবাসীর উদ্যোগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তবে তখন সাইফুলের বিয়ের অনুষ্ঠান করার মতো সামর্থ্য ছিল না। তাই সাইফুল মনে মনে পণ করেছিলেন, সামর্থ্য হলে এক শ বরযাত্রী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন। সেই ইচ্ছা পূরণ করতে গতকাল আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং তাদের দুই সন্তানসহ শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন।
চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর আর বউয়ের মধ্যে আগে প্রেম ছিল। স্থানীয় লোকজন তখন বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। তবে বরের ইচ্ছা ছিল অনুষ্ঠান করে বিয়ে করার। ১৭ বছর পর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। এমন বিয়ের অনুষ্ঠান এই এলাকায় আগে কখনো হয়নি।’
চাপড়া ইউপির চেয়ারম্যান এনামূল হক মঞ্জু বলেন, ‘ফেসবুকে দেখেছি বাজনা বাজিয়ে বরযাত্রী নিয়ে বর-বউ গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। বিষয়টি এলাকায় বেশ আলোচিত হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি এখনো জানতে পারিনি।’