সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়ে গেছে। মহালয়ার পর থেকেই পুজোর আমেজ শুরু হয়। তবে দেবী উমার মর্ত্যে আগমনকে কেন্দ্র করে পুজো শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন সকাল থেকেই। আর আজ সেই শুভক্ষণ, চলতি বছরের দুর্গোৎসবের সূচনা।
মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় পুজো। পৌরাণিক কাহিনীতে কথিত রয়েছে, মহাষষ্ঠীর দিনে উমা কৈলাস থেকে তার সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে মর্ত্যে অবতরণ করেন। এরপর এই দিন দুর্গার বোধনের মাধ্যমে পরবর্তী সমস্ত আচার অনুষ্ঠান শুরু হয় মণ্ডপে মণ্ডপে। শোনা যায় ঢাকের আওয়াজ। আলোয় সাজে পুজোর প্যান্ডেল থেকে বাড়ির মন্দির পর্যন্ত।
শনিবার (১ অক্টোবর) ভোরে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে মহাষষ্ঠীর দিন শুরু হয়েছে। এদিন সকাল থেকেই চন্ডিপাঠে সকল মন্ডপ মুখরিত ।
রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘন্টে বলা হয়েছে, উৎসবের দ্বিতীয় দিন রোববার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০মিনিটে। সোমবার মহাঅষ্টমী পূজা আনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকাল ৪ টা ৪৪ মিনিটে গতে এবং সমাপন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুস্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুস্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে । সন্ধ্যা- আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপি এ উৎসবের।
ষষ্ঠীর বোধন
বোধন শব্দের যদি আক্ষরিক অর্থ হল জাগ্ৰত করা। দুর্গা পুজোর একেবারে প্রথমেই তাই এই রীতির মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয় মর্ত্যে । ষষ্ঠীর সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় তার প্রক্রিয়া । এরপর সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলে পুজো এবং প্রার্থনা করা হয় যাতে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত কোনো রকম বিঘ্ন না ঘটে পুজো পর্বে। ঘট এবং জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের এক কোণে স্থাপন করা হয় । সেখানে আরাধনা করা হয় দেবী দুর্গা এবং চণ্ডীর। তারপর শুরু হয় বোধন পর্ব। এরপর একে একে অধিবাস এবং আমন্ত্রণের পর্ব।
এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে দেবীর গমন নৌকায় যার অর্থ জল এবং শস্যবৃদ্ধি। বিগত দুটি বছর করোনার প্রকোপ পুজোর আনন্দকে কিছুটা হলেও ফিকে করে দিয়েছিল। কিন্ত এবার সেই চিরচেনা রূপে আবারও মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে উঠবে ঢাকের বাজনা।
গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যারতি, ধূনচী নাচসহ পূজার পাঁচদিনই থাকছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। অপরদিকে, রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, এবছর উমা’র আগমন গজে এবং ফিরে যাবেন নৌকায়। মায়ের গজে আগমনের ফলশ্রুতি হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর নৌকায় গমনের ফলশ্রুতি শস্যবৃদ্ধি এবং জলবৃদ্ধি। এ বছর দেশের অনেক স্থান বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে, অনেক শস্যাদি নষ্ট হয়েছে। তারই একটা প্রভাব আসছে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগের তুলনায় এবারও কিছু পূজার আয়োজন বেড়েছে।
গত বছরে দুর্গাপূজার সময় দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর প্রশাসন অনেক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। তাই বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই বিশাল আয়োজন সকলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখরভাবে পালনে আমরা আশাবাদী।