গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
কবি নজরুলের ‘মানুষ’ কবিতার এই উক্তির মতো সম্প্রীতির এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাগেরহাটের দুই ব্যক্তি। গোটা দেশে যখন টিপ পরা, হিজাব পরা বা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটছে, সেখানে তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে মানবতার ইতিহাস লিখেছেন।
ফকিরহাট আজাহার আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রণব কুমার ঘোষ মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি দান করেছেন। আর স্থনীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমান শ্মশানের জন্য জমি দান করেছেন। বিপরীত ধর্মের উপাসনালয়ের জন্য জমি দানকে মহত্ব হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি তাদের সম্মাননা দিয়েছে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থা। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে সমাদৃত হচ্ছে তাদের মহৎ কর্ম।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাটের ফকিরহাট বিশ্বরোড সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘ দিন কোনো মসজিদ ছিল না। স্থানীয় মুসল্লিরা অনেক দূরের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতেন। মুসলমানদের এই সমস্যা সমাধানে ২০০৯ সালে মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য ৩৫ শতক জমি দেন প্রণব কুমার ঘোষ। জমি বাবদ নাম মাত্র মূল্য নেন তিনি।
অন্যদিকে তিন বছর আগে, একই এলাকায় ভৈরব নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্মশান। ফলে শেষকৃত্য করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছিল তাদের। এই অবস্থায় শেখ মিজানুর রহমান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দান করেন। তবে কতটুকু জমি দিয়েছেন,তা জানাতে রাজি হননি।
সম্প্রতি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা সদরের আট্টাকি গ্রামে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলার আয়োজন করে। সেই আয়োজনে এই দু’জনের জমিদানের বিষয়টি উঠে আসে। এখানেই তাদেরকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে বসবাস এই অঞ্চলের প্রাচীন সামাজিকতা। সুখে, দুঃখে সবসময় তারা এভাবেই একে অপরের পাশে থাকতে চান বলে জানান স্থানীয়রা।