দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বলিউড দাপিয়ে বেড়ানো কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। সিনেমাপ্রেমীদের কাছে পরিচিত ‘ট্রাজেডি কিং’ বলেই। যদিও তার আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। জন্ম পাকিস্তানের খাইবার প্রদেশে, ১৯২২ সালে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবেই ইউসুফ থেকে দিলীপ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল ‘জোয়ার ভাটা’ সিনেমা দিয়ে। ছবি: সংগৃহীত
ইউসুফের বয়স তখন আট বছর, বাবা মোহাম্মদ সারোয়ার খান পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। কৈশোর না পেরুতেই জীবিকার খোঁজে বাড়ি ছাড়েন তিনি। কাজ নেন পুনেতে, ব্রিটিশ সেনাদের পরিচালিক একটি ক্যান্টিনে। কিছু দিন যেতেই সেখান থেকে ফিরে এসে হাল ধরেন বাবার ব্যবসার।

অভিনয় করেছের ৬০টিরও বেশি সিনেমায় । ছবি: সংগৃহীত
সেই সূত্রেই ইউসুফের পরিচয় হয়, সে সময়ের বিখ্যাত সাইকোলোজিস্ট ড. মাসানির সাথে। তিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বোম্বে টকিজ’এর মালিকের সাথে। সেই সূত্রেই সেনাবাহিনীর ক্লাবে একটি স্যান্ডুইচের দোকান দেন। কঠোর পরিশ্রমী ও চৌকস তরুণ ইউসুফ ইংরেজিতে খুব দক্ষ ছিলেন। সব মিলে ব্যবসা দাঁড় করাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।
তবে ব্যবসাতেও বেশি দিন শিকড় গাড়েননি তিনি। ১৯৪৩ সালে চাকরির সন্ধানে যান বোম্বে টকিজে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধীকারী দেবিকা রানী তাদে চাকরির বদলে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। সাত পাঁচ না ভেবেই রাজি হয়ে যান ইউসুফ। সে সময় ইউসুফ সারোয়ার খান নামটি বদলিয়ে একটি ফিল্মি নামের পরামর্শ দেন দেবিকা রানী। স্ত্রিনে তার রোম্যান্টিক ধাঁচের সাথে মিলিয়ে, লেখক ভগবতি চরণ বর্মা তার নাম দেন ‘দিলীপ কুমার।

মুঘল-এ-আজম সিনেমায় সহশিল্পীর সাথে দিলীপ কুমার। ছবি: সংগৃহীত
সেই থেকেই রুপালি পর্দায় পথ চলা। এক বছর বাদেই মুক্তি পায় প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাটা’। শুরুর দিকে ছবিগুলো ব্যবসা সফল না হলেও দমে জাননি দিলীপ। ১৯৬০ সালে মুঘল-এ-আজম তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসা সফল সিনেমা এটি।
ছয় দশকের অভিনয় জীবনে তাঁর রয়েছে ৬৫টিরও বেশি সিনেমা। অভিনয় করেছেন দেবদাস, মুঘল-এ-আজম, গঙ্গা-যমুনাসহ বেশ কিছু আইকনিক সিনেমায়। সবচেয়ে বেশি জুটি বদ্ধ হয়েছেন নায়িকা নার্গিসের সাথে। তবে মধুবালার
সাথে তার জুটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়। আত্মজীবনীতে মুধবালার ওপর বিশেষ আকর্ষণ ছিল বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তবে ব্যক্তি জীবনে তিনি গাট বেঁধেছিলেন সায়েরা বানুর সাথে।
তাঁকে শেষ পর্দায় দেখা যায় ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ সিনেমাতে। অভিনয়ের জন্য ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ পদক পান গুণি এই শিল্পী। ২০১৬ সালে পেয়েছেন ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব পদ্মবিভূষণ।
বলিউডের আকাশে ঝলমলে তারা দিলীপ কুমার, ৯৮ বছর বয়সে তার কর্মময় জীবনের অবসান হয়।