শাহিদা বেগমের সংসার ১২টি বিড়াল নিয়ে। এই খুপরি ঘরে, রোদে-তাপে, ঝড়-বাদলে, তার সঙ্গী এই প্রাণীরাই। রাজধানীর উত্তরা রেল গেট এলাকার মানুষের কাছে, তিনি এক নামে পরিচিত- বেড়ালের মা হিসেবে।
চেয়ে-চিনতে যা জোটে, তাই দিয়েই তিন বেলা সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেন এই নারী। নিজের এবং বেড়ালের রান্না হয় এক হাড়িতেই।

বেড়ালের সাথে খুনসুটিতে মেতে আছেন শাহিদা বেগম।
তিনি জানান, ছোট বেলা থেকেই প্রাণীর প্রতি ভালবাসা রয়েছে তার। আর বিড়াল পালন শুরু করেন শিশু বেলা থেকেই।
শাহিদা বেগমের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। একলা ঘরে এই বিড়ালরাই তার কথা বলার সঙ্গী। আছে একটি কুকুরও। খুনসুটি, আনন্দ আর ভালবাসা দিয়ে জড়ানো এই সম্পর্ক।
শাহিদা বলেন , ‘ মানুষের থেকে চাইয়া যা পাই তাই দিয়া ওগো খাওয়াই। বছর খানেক আগেও ২২ টি বিড়াল ছিল। অনেকে নিয়া গেছে চুরি কইরা। এখন ১২টা আছে। বিড়াল ছাড়া আমি থাকতে পারি না। ওরা হইছে আমার মহব্বত। ওগো লইয়াই থাকি।’
তিনি জানান, লকডাউনের সময় অনেকেই বিড়ালগুলো বিক্রি করে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু অভাবে কি সন্তান বিক্রি করতে পারে মা? এই ভাবনা থেকে যেন আরও একটু আগলে ধরেছেন প্রাণীগুলোকে।
‘লকডাউনের সময় তো বিড়াল নিয়া মেলা বিপদে পড়ছিলাম। কিন্তু বিক্রি করি নাই। আমি তো ওগো মা, ক্যামনে ফালাইয়া দেই। তয় অনেকেই সাহায্য করেছে। রিমন চাচা (সাঈদ রিমন, সমাজ কর্মী) ও তার মায় টাকা, চাউল, ডাইল দিছে। বিড়ালের জন্য দুধও দিছে অনেকে।”
বেড়ালের প্রতি শাহিদার এমন ভালবাসা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন। অসময়ে বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাতও।
সমাজসেবী সাঈদ রিমন বলেন,’ এখন তো মানুষের প্রতিই মানুষের ভালবাসা কমে গেছে। সেখানে পশুর প্রতি শাহিদা বেগমের এমন ভালবাসা আমাদের জন্য অনেক শিক্ষনীয়’
তাকে দেখে প্রাণীর প্রতি সহনশীল হতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন আশে পাশের বাসিন্দারাও।
রেলগেট এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা তারে বিড়ালের মা হিসেবেই চিনি। খুব আদর করে বিড়ালগুলারে। ভাল লাগে দেখে’।
শাহিদা বেগম মনে করেন, মানুষের যেমন এই পৃথিবী, তেমনি এই প্রাণীদেরও। ভালবাসলে প্রতিদানে শুধু ভালবাসাই দিবে এই প্রাণীরা।
https://www.facebook.com/bbsbangla.news/videos/255737593138329