বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের আজ জন্মদিন। আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এই তিন ঘটনা মিলিয়ে বৈশাখী পূর্ণিমা। যা কিনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান এটি।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে আজ বুধবার (২৬ মে) সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে আজ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া, বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের জন্য আজ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ) খ্রিস্টের জন্মের ৫৬৩ বছর আগে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনি কাননে (নেপাল) জন্ম নেন। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবাস্তু নগরীর রাজা শুদ্ধোধন এর ছেলে ছিলেন। তার জন্মের ৭ দিন পর মা রানি মহামায়া মারা যান।
সে সময় জনৈক কপিল নামক সন্ন্যাসী কপিলাবাস্তু নগরীতে আসেন। তিনি সিদ্ধার্থকে দেখে ভবিষ্যৎবাণী করেন যে, সিদ্ধার্থ ভবিষ্যতে চারদিক জয়ী রাজা হবেন, নয়তো একজন মহামানব হবেন। মা মারা যাবার পর সৎ মা মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাকে লালন-পালন করেন। তাই তার অপর নাম হয় গৌতম। ছোটোবেলা থেকেই সিদ্ধার্থ সব বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু সিদ্ধার্থ সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন বলে তাকে সংসারি করানোর জন্য ১৬ বছর বয়সে রাজা শুদ্ধোধন যশোধরা মতান্তরে যশোধা বা গোপা দেবী নামক এক সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে দেন। সেই ঘরে তার রাহুল নামে একটি ছেলে হয়।
তিনি ছিলেন গৃহত্যাগী, ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন বুদ্ধ। দীর্ঘ ৬ বছর কঠোর সাধনার পর তিনি ‘বুদ্ধগয়া’ নামক স্থানে একটি বোধিবৃক্ষের নিচে বোধিজ্ঞান লাভ করেন। এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর বুদ্ধ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার বৌদ্ধ ধর্মের বাণী প্রচার করেন এবং তার প্রচারিত বাণী ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশে ও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে খ্রিস্টের জন্মের ৪৮৩ বছর আগে কুশীনগর নামক স্থানে ৮০ বছর বয়সে মহামতি বুদ্ধ মৃত্যুবরণ করেন।
গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বানীর মূল অর্থ হলো, অহিংসা। বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা হলো সব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সবরকম বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য।
‘বর্তমান বিশ্ব করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত। এরইমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে’ উল্লেখ করে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে এবারের বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।