পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে উৎসবে মশগুল ছিল সারাদেশ। আর রাজধানীবাসীর মধ্যে এই আনন্দ যেনো একটু বেশই দেখা গিয়েছিল। তাইতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বারণ স্বত্ত্বেও আতশবাজি, ফানুশ উড়ানোর কমতি ছিল না কোথাও। বাজিওর বিকট শব্দ ও ফানুশের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল গোটা ঢাকা।
কিন্ত কথায় বলে না, কারো পৌষ মাস, কারো বা সর্বনাশ। এমনটাই ঘটেছিল চার মাস বয়সী শিশু উমায়েরের জীবনে। যা শেষ হলো করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে।
জন্মগতভাবেই হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র ছিল উমায়েরের। রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা হচ্ছিল শিশুটির। গত শনিবার (১ জানুয়ারি) শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাবা ইউসুফ রায়হান। হাসপাতালে ভর্তির তিন ঘণ্টা পর হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় ছেলেটি।
উমায়েরের বাবা বলেন, বর্ষবরণের রাতে আতশবাজির বিকট শব্দে ভয়ে ছেলেটা বারবার কেঁপে উঠছিল। সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। সকাল থেকে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। সকালে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আমার ছেলে।
‘ওই রাতের বিকট শব্দের কারণেই আমার ছেলের এই পরিণতি হলো কি না, সেটা বলতে পারব না। তবে চিকিৎসকেরা বলেছেন, আমার ছেলে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে- এমনটি জানান ইউসুফ।
সোমবার বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে ছোট্ট উমায়ের ও তার বাবার ছবি। অনেকেই এই আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ আতশবাজি নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছেন।
ইউসুফের মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে একটি মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকান রয়েছে। তিনি ছয় বছর আগে বিয়ে করেন। উমায়ের ছারাও তার পাঁচ বছর বয়সী আরেকটি ছেলে রয়েছে।
ইউসুফ রায়হান ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তার ফেসবুকে লেখেন, ‘কী বিকট শব্দ! আমার ছোট বাচ্চাটি এমনিতে হার্টের রোগী। আতশবাজির প্রচণ্ড শব্দে বাচ্চাটি আমার ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠে। খুব ভয় পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। খুব আতঙ্কে রাত পার করছি।’
ডিসেম্বরের প্রথম দিকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় উমায়ের। গত ১০ ডিসেম্বর তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নেওয়া হয়।
চার দিন পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরে শিশু উমায়ের। কিন্ত সপ্তাহ পার না হতেই আবার তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে চিকিৎসক ব্যস্ত থাকায় উমায়েরকে আর সেদিন হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।