আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস আজ। ‘ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারীদের ভূমিকা’- প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও দিবসটি বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীরা যে ভূমিকা পালন করেন, তার ওপর জোর দেয়া নিয়েই এবারের প্রতিপাদ্য।
১৯৮২ সালের ৯ আগস্ট জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকের পর জাতিসংঘ কর্তৃক আদিবাসী জনসংখ্যা সংক্রান্ত প্রথম ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। বৈঠকে জাতিসংঘের সংস্থাকে আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করাই এর প্রধান লক্ষ্য ছিল। ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রতি বছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিবছর জাতিসংঘ ঘোষিত প্রতিপাদ্য বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বার্ষিক প্রকল্প এবং বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বাংলাদেশে আদিবাসী শব্দ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সম্প্রদায় উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাংলাদেশের আদিবাসীরা নিজেদের আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। জাতিসংঘ তাদের দাপ্তরিক কাজে ইন্ডিজিনাস অর্থাৎ আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও,গাইবান্ধা, বগুড়া ইত্যাদি জেলাগুলিতে সাঁওতাল, শিং (গঞ্জু), ওঁরাও, মুন্ডারি, বেদিয়া মাহাতো, রাজোয়ার, কর্মকার, তেলী,তুরী, ভুইমালী, কোল, কড়া, রাজবংশী, মাল পাহাড়িয়া, মাহালী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠি বসবাস করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া,বম, খুমী ও চাক জনগোষ্ঠি বসবাস করছে। বিশ্বের অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাংলাদেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও বহুত্ববাদে বিশ্বাসী মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।