fbpx

‘আমার অন্যতম এজেন্ডা হচ্ছে নাট্যকারদের রয়ালিটি প্রতিষ্ঠা করা’

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান আলমগীর। ছয় বছর অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর এবার তিনি নতুন পদে। নতুন দায়িত্ব, নাট্যকারদের সঙ্কট সম্ভাবনা ও নিজের লেখালেখি নিয়ে বিবিএস বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনার প্রথম চ্যালেঞ্জ কী মনে হয়েছে?
আহসান আলমগীর : আমার কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ মনে হয়েছে, সংগঠনের সব সদস্যকে অ্যাক্টিভ করে তোলা। সংগঠনের প্রায় ৩০% সদস্য অ্যাক্টিভ না। যেহেতু টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ মননশীল নাট্যকারদের সংগঠন, সেহেতু আমরা প্রথাগত অপরাপর সংগঠনের মতো নাচ, গান, আনন্দ-উৎসব অনুষ্ঠান করিনা, তাই অনেকেই মজা পান না! তাই আগামী দুই বছর সম্মানিত সদস্যদের জন্য মননের উন্নয়নের পাশাপাশি আনন্দ বিনোদনের ব্যবস্থা রেখেই অনুষ্ঠান সাজনোর চেষ্টা থাকবে।

টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ কী নাট্যকারদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য কোনো কাজ করবে?
আহসান আলমগীর : নাট্যকারদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ ইতিপূর্বেও ৩ মাসব্যাপী এবং ৩ দিনব্যাপী অনলাইন ওয়ার্কশপ এর আয়োজন করেছিল। ওয়ার্কশপ কার্যক্রম একইভাবে অব্যাহত থাকবে। এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আরো জোরদার করা হবে।

স্ক্রিপ্ট না হলে কোনো প্রজেক্টই কাজ শুরু করতে পারে না সেটা সিনেমা নাটক বা বিজ্ঞাপন চিত্র, কিন্তু এ দেশে সবার পরে পেমেন্ট পান নাট্যকাররা। আবার পেমেন্ট ঠিকমতো দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে নাট্যকারদের সম্মানি খুবই কম দেওয়া হয় বলা হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে আপনরা কোনো কাজ করবেন কিনা?
আহসান আলমগীর : আমাদের দ্বন্দ্ব নিরসন কমিটি নামে একটা কমিটি থাকে, দ্বন্দ্ব নিরসন কমিটির মাধ্যমে নাট্যকারদের যথাযথ সম্মানী আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। এবং শুটিংয়ের আগেই নাট্যকারের সম্মানী পরিশোধের জন্য আন্ত সংগঠনের সাথে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এবং সকল নাট‍্যকারদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে, তারা যেন কোন অবস্থাতেই চুক্তিনামা সই করা ছাড়া কাজ না করেন এবং বিনামূল্যে অথবা বাকিতে স্ক্রিপ্ট না দেন। নিজ দায়িত্বে শুটিংয়ের আগেই সম্মানী বুঝে নেওয়া সংশ্লিষ্ট নাট্যকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো সংবাদমাধ্যমে অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং নির্মাতাকে আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, ভালো গল্পের অভাব! অথচ এদেশের সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে নাট্যকার। সম্মান এবং সম্মানী দুটোই সর্বনিম্ন। সবার পেমেন্ট দেওয়ার পর নাট্যকারের সম্মানী থাকে না। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সম্মানী না দিলে নাট্যকার ভালো গল্প ভাববেন কী করে, হাওয়া খেয়ে? এখন তো অধিকাংশ পরিচালকের স্ক্রিপ্ট প্রয়োজন হয়না। অভিনেতা-অভিনেত্রী দাঁড়িয়ে কথা বলেন, ক্যামেরাম্যান ফ্রেম ধরে রাখেন। এতে নাটক নেমে যায়! তার উপর শুরু হয়েছে বিদেশি সিনেমার গল্প নকল করে নাটক নির্মাণের প্রবণতা। ঠিক এভাবেই এফডিসি কেন্দ্রিক সিনেমা থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একই অবস্থা টেলিভিশন নাটকে হতে চলেছে, এর কারণ ভালো স্ক্রিপ্ট এবং ভাল গল্পের প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করা। সম্মানি পাওয়া নিয়ে আমাদের আন্ত সংগঠনের একটি চুক্তিনামা রয়েছে। সেটি নাট্যকারের সাথে প্রযোজক এবং পরিচালকের।

 

সংগঠন থেকে সংগঠনের সদস্যদের আর্থিক নিরাপত্তার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা, সেটা জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা বা অবসর ভাতা ধরনের হতে পারে কিনা…
আহসান আলমগীর : নাট্যকারদের দুঃসময়ে পাশে থাকার চর্চা আমরা গত করোনার সময় থেকে শুরু করেছি। করোনাকালীন সংগঠনের সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছিল এবং অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন সদস্যের পাশে আমরা আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। এটি অব্যাহত থাকবে। জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে যে প্রশ্নটি করেছেন এটি একটি ভাল উদ্যোগ হতে পারে। তবে অবসর ভাতা চালু করা খুব কঠিন কাজ হবে বলে মনে হয়, কারণ এক্ষেত্রে সংগঠন অনেক সচ্ছল হতে হবে। সেটি ভবিষ্যতে হলেও হতে পারে, তবে আমি আপাতত ভাবছি না।

সাংগঠনিক বিষয় কি লেখালেখিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনি মনে করেন…
আহসান আলমগীর : সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ায় আমার লেখালেখিতে কিছুটা প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে, তবে গত ৩ কমিটির ৬ বছর আমি অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বের পাশাপাশি টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সব কার্যক্রমেই ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব এবং লেখালেখি সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে পারবো।

গীতিকাররা, শিল্পীরা তাদের কাজের জন্য রয়ালিটি পেয়ে থাকেন, নাট্যকারদের একটি নাটক অংসখ্যবার প্রচার করার পরও কোনো রয়ালিটি দেওয়া হয় না, এ ক্ষেত্রে কপিরাইট আইন ভঙ করা হচ্ছে বলে কি মনে হয়। যদি আইন ভঙ হয়, তাহলে এর সমাধান কী, নাট্যকারদের রয়ালিটি দেওয়ার বিষয়ে টিভি চ্যানেল বা ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা?
আহসান আলমগীর : রয়ালিটির ব্যাপারে যে প্রশ্নটি করেছেন, বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র নাট্যকার আমি, যে কিনা টেলিভিশন নাটকের কপিরাইট করেছি। এবার আমার অন্যতম একটি এজেন্ডা হচ্ছে নাট্যকারদের রয়ালিটি প্রতিষ্ঠা করা। যেহেতু আমি এককভাবে করতে পেরেছি, এবার সাংগঠনিকভাবে রয়ালিটি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা করব। আর রয়ালিটি যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে নাট্যকারদের আর্থিক বিষয়টা নিশ্চিত করা যাবে। এই ব্যাপারে আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রথম কাজ। আইন বাস্তবায়ন হলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছেও ধর্না দিতে হবে না। কারণ তারা তখন রয়ালিটি প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply