fbpx

ইরানি নির্মাতার অভিযোগ, জবাব দিলেন অনন্ত জলিল

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বৃহস্পতিবার(১৮ আগস্ট) ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টের মাধ্যমে ইরানি নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন। তিনি জানান, তিনি অনন্তের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

মুর্তজা এই বলে অভিযোগ করেন যে, ‘ডে’ (রুজ) ছবিটি নিয়ে চুক্তিতে যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার কিছুই ঘটেনি। তিনি আমাদের প্রযোজনা নষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি তার মতো করে ছবিটি চালিয়েছেন নিজের মতো করে। এটা সরাসরি আমাদের প্রধান চুক্তির লঙ্ঘন। অথচ আমি এই আয়োজনের প্রধান প্রযোজক আমি।’

বাংলাদেশের সাথে কাজ করা প্রসঙ্গে ইরানি এই নির্মাতা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সাথে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র কারণ ছিল, ইরানি ও বাঙালি জনগণের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করা। বিভিন্ন দিক দিয়ে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি বিনিময় করা এবং একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানা। কারণ আমি বিশ্বাস করি, শিল্পই একমাত্র সর্বজনীন ভাষা যা সীমানা ভেঙে দেয়।’

বিষয়টি নিয়ে তিনি আরো লেখেন, ‘আমি বাঙালি সংস্কৃতিকে সম্মান করি এ কারণে তার (অনন্ত জলিল) সঙ্গে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে কোনও সমাধান দেননি। অনন্ত তার বিরুদ্ধে তেহরানে অভিযোগ করা এবং আন্তর্জাতিক উকিলের মাধ্যমে মামলা করা ছাড়া কোনও পথ খোলা রাখেননি।’

ইরানি নির্মাতার এই অভিযোগের পালটা উত্তরও দিয়েছেন অনন্ত জলিল। তিনি চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মুর্তজা অতাশ জমজমের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জবাব দিতে ফেইসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন অনন্ত জলিল।

অনন্ত জলিল লিখেছেন, ‘আমি শুরুতেই বলে এসেছি, এ সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ইরান। আমার সঙ্গে চুক্তি আছে যে, সিনেমাটির বাংলাদেশে যেসব কাজ হবে (শুটিং, ডাবিং) সেটার ব্যয়ভার আমি বহন করব; এবং আমি সেটাই করেছি। চুক্তি অনুযায়ী, ইরানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে শুটিংয়ের খরচ বহন করবে ইরানী প্রযোজক। ইরান যে সিনেমাটির মূল প্রযোজক সেটা পরিচালকই তার স্ট্যাটাসে দেওয়া একটি বাক্যের (আমি ছিলাম সিনেমাটির মূল প্রযোজক) মাধ্যমে স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে  একটা বিষয় পরিষ্কার হয় যে, সিনেমাটিতে আমি শুধু বাংলাদেশের খরচ বহন করেছি এবং এটাই ছিল চুক্তি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বাংলায় একটি নাম ব্যবহার করেছি। তাও ‘ডে’-এর বাংলা, অর্থাৎ ‘দিন’। ইরানি প্রযোজকের দেওয়া নামও (ডে) কিন্তু সিনেমায় রয়ে গেছে। এটাও আমাদের মৌখিক আলোচনায় ছিল। যেহেতু সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হবে, তাই বাংলা নাম থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। আর আর্ন্তজাতিকভাবে মুক্তির জন্য সঙ্গে ইংরেজি নামও রয়েছে। সুতরাং নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর। তিনি (ইরানি নির্মাতা) যে গল্পের কথা বলেছেন, সেটা আমরা দুজনেরই আইডিয়া। সিনেমার গল্প আমি এবং মুর্তজা সাহেব দুজনে আলোচনা করে ঠিক করেছি। ইরানের শুটিং শুরুর পর ইরানি প্রযোজক আমাদেরকে সম্মানের সঙ্গে পাঁচতারকা হোটেলে রেখেছেন। আমরাও বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময় ইরানি ইউনিটকে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রেখেছিলাম। সম্মান এবং আতিথেয়তায় কোনো ঘাটতি রাখিনি। এ সিনেমার পরিচালক যেহেতু মুস্তফা অতাশ জমজম, তাই শুটিংয়ের যাবতীয় ইক্যুপমেন্ট, অর্থাৎ এইট-কে রেজুলেশনের ক্যামেরা তিনি ইরান থেকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। ইরানসহ অন্যান্য দেশের শুটিংয়ের ফুটেজ, এমন কি বাংলাদেশে শুটিংয়ের ফুটেজও তিনি ইরান নিয়ে গেছেন লাইনআপ করার জন্য। ২০২০ সালে শুটিং শেষে তিনি আমাকে এডিট করা একটা লাইনআপ পাঠালেন। আমি সেটা দেখে গল্পে বেশ কিছু জায়গায় অসামঞ্জস্যতা দেখে বলেছি, আমাকে একটা কপি দেন, আমি সেটা ঠিক করে দিচ্ছি। যেহেতু ইরান গিয়ে এডিটিং করা সম্ভব নয়, তাই আমি ঠিক করি ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে কাজটি করব। সেই ফুটেজের কপি তিনি নিজেই সঙ্গে করে অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে নিয়ে আসেন। আমাদের সঙ্গে ৪/৫ দিন হায়দ্রাবাদে অবস্থান করে তিনি নিজ দেশ ইরানে ফিরেও যান। আমরা সিনেমাটিতে ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করতে চাইলাম। যেহেতু ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করলে তাদের লাইসেন্স লাগে, আর ডলবি আমেরিকান কোম্পানি, ইরান সেটা ব্যবহার করতে পারবে না। তাই আমি বলেছি আমার দেশে (বাংলাদেশ) ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করব। বিষয়টিতে তিনি রাজি হয়েই স্বশরীরে ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে সিনেমাটির ফুটেজ নিয়ে আসেন। যদি কোনো অর্থ পাওনা থাকত তাহলে তিনি কি ফুটেজ নিয়ে আসতেন? এছাড়া সিনেমাটির সম্পূর্ণ ফুটেজ এখনও তার কাছেই রয়ে গেছে। যেহেতু তিনি সিনেমাটির মূল প্রযোজক এবং পরিচালক, তাই তার কাছে সেটা থাকাটাই স্বাভাবিক। চুক্তিতে যেভাবে যা কিছু উল্লেখ ছিল, সে অনুযায়ীই আমি কাজ করেছি। যদি আমার কাছে তিনি ১০০ টাকাও অর্থাৎ কোনো অর্থ পাওনা থাকতেন তাহলে তিনি কি আমাকে সিনেমার সম্পূর্ণ ফুটেজ দিতেন?’

সিনেমার মুক্তি নিয়ে পরিচালক কোনো আপত্তি জানাননি দাবি করে অনন্ত জলিল লেখেন, “২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা যখন বাংলাদেশে হোটেল লো মেরিডিয়ানে এ সিনেমার গান ও প্রাথমিক ট্রেইলর উদ্বোধন করি, তখনও তিনি উপস্থিত ছিলেন, এবং সিনেমাটি যে আমরা বাংলাদেশে মুক্তি দেব, সে ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানাননি। আমি এটাও বলেছি যে, ইরান যদি সময়মতো মুক্তি দিতে না পারে তাহলে আমি বাংলাদেশে মুক্তি দেব। এসব নিয়েও তখন কোনো আপত্তি করেননি তিনি। ইরান সময়মতো মুক্তি দিতে পারছে না বলে, তিনবার আমরা মুক্তির তারিখ ঘোষণা দিয়েও সেটা পরিবর্তন করি।”

“এখন তার অবান্তর অভিযোগ মূলত আমাকে ও আমার দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ছোট করার অপপ্রয়াস বলে আমি মনে করি,” লিখেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ঈদুল আযহায় সারাদেশে মুক্তি পায় ‘দিন দ্য ডে’ ছবি। এতে অনন্তর সাথে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন বর্ষা। ছবিতে ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। যৌথ প্রযোজনার ছবি হিসেবে ছবিটি ইরান ও বাংলাদেশে একই সময়ে মুক্তির কথা থাকলেও সেটি আর সম্ভব হয়নি।

Advertisement
Share.

Leave A Reply