fbpx

একজন হুমায়ুন ও তার উপস্থিতি!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

হুমায়ুন আহমেদের শেষ লেখা ছিলো ‘দেয়াল’। কী অদ্ভুত, শেষ লেখার মতই জীবন ও মরণের মাঝে ঠিক দেয়াল তুলে দিয়েছেন সারাজীবনের জন্য। এমন এক বর্ষার দিনেই তিনি চলে গিয়েছিলেন। আর ফিরে আসেননি, আসবেনও না কোনোদিন। তবে তিনি না থেকেও আছেন সবার হৃদয়ে।

সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন। গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী, প্রবন্ধ, কল্প বিজ্ঞানে তিনি যেমন দক্ষতা দেখিয়েছেন, তেমনি নাটক, সিনেমা নির্মাণেও তিনি সিদ্ধহস্ত। অনেকে এ কথাও বলে থাকেন লেখক হুমায়ুনের চেয়েও নির্মাতা হুমায়ুন অনেক বেশি শক্তিশালী। এটা অবশ্য ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন মত হতেই পারে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, তরুণ পড়ুয়াদের কাছে হুমায়ুনের আছে বিশেষ আবেদন। এমনকি একটি শ্রেণী বই পড়ার অভ্যাসই গড়ে তুলেছে হুমায়ুন আহমেদের বই দিয়ে।

‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’ প্রথম দুইটি বহুল নন্দিত উপন্যাস। জীবনের শুরুতে এই দুটি উপন্যাসই তাকে বহুল পরিচিতি এনে দিয়েছিলো।

হুমায়ুন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে। পিতা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ। মাতা আয়েশা ফয়েজ। ছোট বেলায় বাবা তার নাম রাখেন শামসুর রহমান কাজল। পরবর্তীতে তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন হুমায়ুন আহমেদ।

হুমায়ুন আহমেদের পিতা ফয়জুর রহমানও একজন লেখক ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় হানাদার বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শহীদ হলেন ফয়জুর রহজমান। হুমায়ুন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজও ছিলেন একজন ভাল লেখিকা। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘জীবন যে রকম’ পাঠক সমাজে খুবই সমাদৃত।

বাবা যেহেতু সরকারি চাকরি করতেন, সেই সুবাদে ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা। এসব ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের প্রকৃতি, রূপ, রস, গন্ধ হুমায়ুনের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে যা তার লেখায় উদ্ভাসিত।

১৯৬৫ সালে বগুড়া জেলা স্কুল থেকে হুমায়ুন রাজশাহী বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে মাধ্যমিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন।এমনকি তিনি ১৯৬৭ সালে মেধাতালিকায় স্থান লাভ করে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে উচ্চতর ডিগ্রী লাভের পর ১৯৮২ সালে পলিমার রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

দীর্ঘদিন তিনি ক্যান্সারের সাথে লড়েছিলেন। ২০১২ সালে ১৯শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহার্টনের বেলভ্যু হাসপাতালে হুমায়ুন আহমদ ক্যানসারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

প্রিয় লেখকের মৃত্যুতে সারাদেশের মানুষ গভীর বেদনায় ডুবে গিয়েছিলো সেদিন। তিনি শুধু একজন লেখক, নাট্যকার, নির্মাতাই ছিলেন না, বাংলাদেশের শিক্ষক, জ্ঞানী বোদ্ধাদের একজন সেদিন চলে গিয়েছিলেন। এ ক্ষতি অপূরণীয়।

বাংলাদেশের পাঠক তাকে গ্রহণ করেছিলো একান্ত নিজের মানুষ মনে করে। ধীরে ধীরে পুরো জাতির সঙ্গে এক গভীর আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন হুমায়ুন।

হুমায়ুন আহমেদ প্রায় তিনশটি গ্রন্থ রচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় স্থান দখল করে আছে উপন্যাস। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের হৃদয়ে হুমায়ুন আহমেদ এখনও সজীব।

Advertisement
Share.

Leave A Reply