fbpx

কক্সবাজারে হবে চায়ের বাগান

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বাংলাদেশে চা উৎপাদনকারী এলাকা বলতে সাধারণত সিলেট, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়কে ধরা হয়ে থাকে। এসব এলাকার পাশাপাশি গারো পাহাড়ের এলাকা বৃহত্তর ময়মনসিংহে চা উৎপাদনের নতুন অঞ্চল। এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ১৪ হাজার একর জমি চা চাষের উপযোগি। নতুন খবর হলো-এবার চা চাষ হবে কক্সবাজারে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড কক্সবাজার জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ সম্প্রসারণে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চা বোর্ডের একটি বিশেষজ্ঞ টিম গত ২৩-২৬ নভেম্বর কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, রামু এবং সদর উপজেলার চা চাষযোগ্য জমি নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়ন সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি চা চাষে আগ্রহীদের তালিকাও প্রস্তুত করেছেন।

বোর্ডের একটি সূত্র বলছে, তালিকা তৈরির পাশাপাশি মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তও সংগ্রহ করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে আছেন ড. এ কে এম রফিকুল হক। তিনি বলেন, কক্সবাজারে চা আবাদ হলে সমূদ্রের নয়নাভিরাম দৃশ্যের সঙ্গে চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগের সুযোগ পাবে পর্যটকরা। যা এ অঞ্চলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

কক্সবাজারে হবে চায়ের বাগানসাগর তীর্থ কক্সবাজার দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ছবি : সংগৃহীত

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, রামু এবং সদর উপজেলায় প্রায় ১,০০০ (এক হাজার) একর জমিতে চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জমি চা আবাদের আওতায় আনা হলে এ অঞ্চল থেকে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ কেজি চা উৎপাদিত হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জহিরুল ইসলামের নির্দেশনায় বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক, বিটিআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (মৃত্তিকা) অসীম কুমার শাহা এবং বোর্ডের অর্থনীতিবিদ জি, এম, আহসান হাবিব এর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ এবং চা চাষে আগ্রহীদের সাথে সম্প্রতি মতবিনিময়ও করেছেন।

সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় চা বোর্ডের বিশেষজ্ঞগণ এ অঞ্চলের মাটিতে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা এবং চা চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার কথা তুলে ধরে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও আগ্রহীদের কাছে চা চাষের সুফল তুলে ধরেছেন।

এদিকে পরিদর্শন শেষে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট প্রস্তুতের কাজ চলছে। যার ওপর ভিত্তি করে কক্সবাজার জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করা হবে।

এছাড়া ক্ষুদ্র পরিসরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে, সহজ উপায়ে কিভাবে লাভজনকভাবে চা আবাদ করা যায় সে বিষয়টিও জানানো হয়েছে কক্সবাজারে চা চাষে আগ্রহীদের।

দেশে ক্ষুদ্র পরিসরে চা–চাষের পথিকৃৎ সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ১৯৯৭ সালে এখানে চা–চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ভালো ফল পায় চা বোর্ড। সেখানে বেসরকারি উদ্যোগে বড় বাগান হয়। ক্ষুদ্র পরিসরে চায়ের আবাদ বেশি জনপ্রিয় হতে থাকে। ছড়িয়ে পড়ে অন্য জেলায়ও।

বাংলাদেশ চা বোর্ড বলছে, দেশে এখন চায়ের চাহিদার তুলনায় ভোগের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বাড়তি চায়ের জন্য আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ২০১৪ সালে দেশে সাড়ে ৬ কোটি কেজির মতো চা উৎপাদিত হয়। বিপরীতে অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ কেজির বেশি। ২০১৮ সালে দেশে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। ভোগ ছিল ৯ কোটি কেজি। এর মধ্যে সাড়ে ৮০ লাখ কেজি চা আসে ক্ষুদ্র পরিসরের আবাদ থেকে। গত চার বছরে ৯ গুণের বেশি বেড়েছে ক্ষুদ্র পরিসরে চায়ের উৎপাদন।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের লক্ষ্য ২০২০ সালে ১ কোটি কেজি চা ক্ষুদ্র খাত থেকে উৎপাদন করা। আর ২০৩০ সালে তা হবে ৩ কোটি কেজি চা। ওই সময় দেশের মোট চা উৎপাদন হবে ১৪ কোটি কেজি এবং চাহিদা থাকবে ১৩ কোটি কেজি। এর মধ্যে ৩ কোটি কেজি আসবে ক্ষুদ্র পরিসর থেকে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে প্রথাগত চা–বাগানের বাইরে প্রথম চা–চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৯৯ সালে, পঞ্চগড়ে। আর উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০২ সালে। এখন উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহে ক্ষুদ্র আকারে চায়ের আবাদ হচ্ছে। এর পাশাপাশি আবাদ হচ্ছে পার্বত্য তিন জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে।

বান্দরবানে চা বোর্ডের নিবন্ধিত প্রায় ৩০০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। এখানে বিঘাপ্রতি ৫০০ কেজির বেশি চা উৎপাদন হচ্ছে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply