fbpx

কম দামে ভারতকে তেল দিতে চায় রাশিয়া

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে বিশ্বের একটা বড় অংশ রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনেও যাচ্ছে না বেশির ভাগ দেশ। আবার দ্রুত আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফট থেকেও দেশটিকে বাদ দেয়া হয়েছে। অনেক দেশই রাশিয়ার বৈদেশিক রিজার্ভ আটকে দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ সংকটে পড়েছে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে আগের চেয়ে কম দামে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এ প্রস্তাবের বিষয়টি বিবেচনা করছে বলেও দেশটির দুজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। জানা গেছে, এ লেনদেনের জন্য একটি রুপি-রুবল ব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ চলছে।

ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ তেল আমদানিকারক। দেশটিতে বছরে যে পরিমাণ তেল প্রয়োজন হয়, তার ৮০ শতাংশই আমদানি করা হয়। এতদিন এর ২-৩ শতাংশ কেনা হতো রাশিয়া থেকে। এ বছর তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। যার কারণে ভারতের জ্বালানি ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে যেহেতু রাশিয়া ছাড়ে তেল কেনার প্রস্তাব দিয়েছে তাই ভারত সরকার চায় দেশটি থেকে আরো বেশি পরিমাণে তেল আমদানি করতে। যেহেতু ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে বেশির ভাগ দেশই তেল কেনার জন্য রাশিয়াকে এড়িয়ে যাচ্ছে সেখানে দেশটি থেকে কোন কোন উপায়ে তেল কেনা যায় সেটিই এখন বিশ্লেষণ করছে ভারত।

ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য নিত্যপণ্য বেশ ছাড়মূল্যে কেনার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। ট্যাংকার, বীমা সুবিধাসহ কিছু বিষয়ের সমাধান হলেই রাশিয়ার দেয়া ছাড়কৃত মূল্যের প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে।

রাশিয়া ছাড়কৃত মূল্যে তেল বিক্রি করলেও তাতে সাড়া মিলছে কম। কিছু আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী মনে করছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনলে তারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে যাবেন। কিন্তু ভারতের কর্মকর্তারা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভারতের তেল আমদানি বন্ধ করা যাবে না। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করে কোন উপায়ে বা কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কেনা যায় সেটি নিয়েই এখন ভারতে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রফতানিকারক ও রাশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।

যেহেতু সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাই এ কেনাকাটার অর্থ লেনদেনের জন্য রুপি-রুবল সমর্থিত একটি লেনদেন ব্যবস্থাও তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই ভারতীয় কর্মকর্তা। এটি তৈরি হয়ে গেলে এ ব্যবস্থার মাধ্যমেই রাশিয়া থেকে তেলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করতে পারবে ভারত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ দুই কর্মকর্তার কেউই এটা নিশ্চিত করতে পারেননি যে কী পরিমাণ তেল কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বা কী পরিমাণ ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। আবার এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে রয়টার্সের করা ই-মেইলেরও জবাব দেয়নি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দেশগুলোকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করেছে রাশিয়া। ভারতের সঙ্গেও দেশটির দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে দেশ দুটির মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। আবার সহিংসতা বন্ধ করতে আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ছিল ভারত। ফলে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সুসম্পর্ক তেল কেনাবেচার মধ্য দিয়েও বজায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ভারতে অর্থবছর হিসাব করা হয় এপ্রিল মাস থেকে। একটি পূর্বাভাস বলছে, নতুন অর্থবছরে ভারতের আমদানি খরচ পাঁচ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সে কারণে তুলনামূলক কম দামে রাশিয়া থেকে কাঁচামাল ও বেলারুশ থেকে সার কিনতে চায় ভারত।

ভারত সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে। সবশেষ গতকাল আরো ১৯৪ কোটি ডলার ভর্তুকি খাতে যুক্ত করেছে। সরকারের ধারণা, সার খাতে ভর্তুকি বিল আগামী অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি রুপি থেকে ৩০ হাজার কোটি রুপিতে পৌঁছবে।

ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, যদি আমরা কম দামে রাশিয়া থেকে সার পাই তাহলে অবশ্যই সেগুলো কিনব। এর মাধ্যমে আমাদের কিছু আর্থিক উদ্বেগ কমানো সম্ভব হবে। তারা বলেন, কম দামে রাশিয়া তেল তেল কেনা গেলে তা ভারতের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে। তেল খাতে মূল্যস্ফীতির যে ধাক্কা ভারতের অর্থনীতিতে লেগেছে তা থেকে অনেকটাই উত্তরণ ঘটবে।

এর আগে গত সপ্তাহে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দার নোভাকের সঙ্গে জ্বালানি সহায়তার বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেন ভারতের তেলবিষয়ক মন্ত্রী হারদীপ পুরি। এরপর এক বিবৃতিতে রুশ সরকার জানায়, ভারত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠতে যাচ্ছে বলে মনে করছে রাশিয়া।

রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হারদীপ পুরি বলেন, রাশিয়া থেকে বা অন্য যেকোনো উৎস থেকে কী পরিমাণ তেল আমদানি করা যাবে, সে বিষয়ে সব সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলছে। রাশিয়া থেকে তেল কিনতে গেলে পরিবহনসহ এ সম্পর্কিত যে ইস্যুগুলো আছে সেগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply