২২ জুলাই বিকাল ৪টায় কবি নূরুল হক শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
সমকালীন বাংলা কবিতার সবচেয়ে গহীন ও নির্জন কাব্য সাধনার নাম কবি নূরুল হক। কবিতায় জীবনকেই প্রধান করে দেখেন তিনি। যাপিত জীবনের আঘাত, অর্জন ও প্রজ্ঞানগুলোই ছড়িয়ে পড়ে কবির রক্তদানায়। সময় এবং সমাজ থেকে কবি কোন ভাবেই ফসকে যেতে পারেন না। হোক রাজনৈতিক, হোক অরাজনৈতিক প্রত্যেকটা বিষয়কেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে কবিতায় নামাতে হয়। নূরুল হকের কবিতা তাই সময় ও যাপিত জীবনের অভিজ্ঞান।
একটা পরম দরদী ভাষায় জীবনের সৌন্দর্য ও অতলতাকেই স্পর্শ করেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের মতে কবি দুই ধরনের; বিশ্বজগতের কবি এবং সাহিত্যজগতের কবি। বিশ্বজগতের কবিরা জগতের মূল প্রস্রবণ থেকে কবিতার সার বস্তু তুলে আনেন। আর সাহিত্যজগতের কবিরা কেবল রচনার কলাকৌশল ও আঙ্গিকের সমৃদ্ধি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ভাষা ও শব্দ সুষমা, সাহিত্যতত্ত্বেই এঁদের মন ও প্রকৃতি। অন্যদিকে নূরুল হকের মতো বিশ্বজগতের কবিরা রক্তদানায় প্রবাহিত কথাকেই লিখতে থাকেন। শুধু কবিত্বের বিকিরণে তিনি সীমায়িত নন; বলার সহজতায় এবং অভিজ্ঞতার অপূর্বতায় তার কবিতা জীবনের ছায়াতল।
নূরুল হকের জন্ম ২৫ নভেম্বর ১৯৪৪, পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলের নেত্রকোণা জেলার বালালী গ্রামে। বাড়ির সামনেই তলার হাওর ও বিস্তৃত আকাশপট। শৈশব কেটেছে এ পরিবেশেই। মলুয়া, মহুয়া, দেওয়ানা মদীনা, চন্দ্রাবতী ও অসংখ্য পালা ঘিরে রেখেছে এ জনপদের জলহাওয়াকে। বাউলগান, কবিগান, গাইনের গীত থেকে শুরু করে মাইট্যা তাম্শা, সিলুক, ভাটিয়ালি হরেকরকম মূর্ছনায় স্পন্দিত হয়ে আছে সেখানকার লোক-জীবন।
১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। অনেক বছর কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।