অনেক দিন আগে মানুষ একটি বিস্ময়কর পদার্থ আবিষ্কার করেছিল । এই জাদুকরী পদার্থটিকে চুয়িং গাম বলা হত। আধুনিক সময়ে চুয়িং গাম শিশু-কিশোরদের কাছে অতি পরিচিত একটি খাবার। প্রতিটি মুদি দোকানেই বিভিন্ন স্বাদের, রংয়ের, আকার কিংবা মূল্যের চুয়িং গাম দেখতে পাওয়া যায়। শিশুরা এসব দেদারসে কেনে।এই খাবারটির রয়েছে এক মজাদার ইতিহাস।
গল্পের শুরু হাজার হাজার বছর আগে, অ্যাজটেক এবং গ্রীকদের মতো প্রাচীন সভ্যতায়। এই চতুর লোকেরা বিভিন্ন গাছের রস চিবিয়ে আনন্দ পেত। তারা বিশ্বাস করত যে এই রসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদের দাঁত পরিষ্কার করতে এবং তাদের শ্বাসকে সতেজ করতে সাহায্য করতে পারে। তারা খুব কমই জানত যে তারা বড় কিছু অর্জন করতে চলেছে। সাধারণত ক্ষুধা মেটাতে কিংবা তৃষ্ণা নিবারণ করতেই এমনটা করতো মায়ানরা। এরপর মেক্সিকোর বিখ্যাত আজটেক সভ্যতায়ও একইভাবে স্যাপোডিল্লা গাছ থেকে উৎপন্ন চুয়িং গাম খাওয়া হতো।
সৌভাগ্যবশত, টমাস অ্যাডামস নামে অন্য একজন ব্যক্তি যিনি একজন ফটোগ্রাফার এবং উদ্ভাবক ছিলেন; মেক্সিকোতে পাওয়া স্যাপোডিলা গাছ থেকে নিষ্কাশিত আঠা থেকে স্বাদযুক্ত চুইং গাম নির্মানের চেষ্টা করেছিলেন। 1871 সালে, অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, টমাস অ্যাডামস সফলভাবে স্বাযযুক্ত চুইংগাম সবার সামনে নিয়ে আসেন। তিনি চুইং গাম উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
টমাস অ্যাডামস মিষ্টি এবং সুগন্ধি স্বাদ মিশ্রিত করেছিলেন যা লোকেরা পছন্দ করত। 19 শতকের শেষের দিকে, উইলিয়াম রিগলি জুনিয়র নামের এক উদ্ভাবক তার নিজের চুইংগাম ব্যবসা শুরু করেন। তিনি উদ্ভাবনী বিপণন কৌশল প্রবর্তন করেন। এই কৌশলটি তার ব্যবসার বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছিল। উদ্ভাবন এখানে থেমে থাকেনি। উদ্ভাবকরা বিভিন্ন স্বাদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, চুইং গাম প্রেমীদের জন্য বিস্তৃত বিকল্প পথ তৈরি করেছেন। পেপারমিন্ট, স্পিয়ারমিন্ট, ফলের স্বাদ এবং এমনকি বুদবুদ ফুঁকানোর ক্ষমতা দিয়ে বাবল গাম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আমাদের দেশে মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি কিংবা বৃদ্ধদের কাছে এর তেমন আবেদন না থাকলে ইউরোপে বা আধুনিক দেশগুলোতে সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে এটি দারুণ এক খাদ্য। খেলোয়াড়েরা খেলার বা অনুশীলনের সময় যেন গলা শুকিয়ে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে প্রায়শই চুয়িং গাম চিবিয়ে থাকেন। সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্বদের ফেলে দেয়া চুয়িং গাম কুড়িয়ে এনে পরবর্তীতে নিলামে বিশাল অংকে বিকোনোর খবরও শোনা গিয়েছে বেশ কয়েকবার।