fbpx

‘জানিনা আবার কবে দেখা হবে, গলা জড়িয়ে ধরবো’

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

প্রত্যেকের জীবনেই নিজের বাবা-মা সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন মানুষ। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও তার ব্যতিক্রম নন। তিনিও রক্তে-মাংসের মানুষ। সাধারণ মানুষের মতই তার অনুভুতি। আর তাইতো বাবাকে নিয়ে তিনি করলেন স্মৃতিচারণ, দিলেন আবেগঘন পোস্ট।

১২ জানুয়ারি(বৃহস্পতিবার) চঞ্চলের বাবার পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি(শুক্রবার) নিজের ফেসবুক  পেজে চঞ্চল বাবাকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে অভিনেতা লিখেছেন, ‘প্রত্যেকটা সন্তান ছোট বেলা থেকেই মায়ের গলায় ঝুলে থাকে,মানে কারনে অকারণে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে থাকে। যেটা আমিও করেছি,এখনো সুযোগ পেলেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরি। কারন একটাই….ভালো লাগে, শান্তি লাগে….ঐশ্বরিক সুখ পাই। বাবার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন ছিল শুরু থেকেই…অন্যদের কথা বলতে পারবো না,আমারটা বলি…বাবার গলা জড়িয়ে ধরাতে আমি ছোট বেলায় কখনই সাবলীল ছিলাম ন।।বেশ ভয়ই পেতাম ছোটবেলায়, যদি থাপ্পড় টাপ্পড় মারে। বাবার মধ্যে একটা গুরু গম্ভীর ব্যাপার দেখতাম,সেই সাথে মনে হয় অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারনেও তার মেজাজটা প্রায়শই উচ্চে অবস্থান করতো। সে কারনেই গলা জড়িয়ে ধরা তো দুরের কথা,পারতপক্ষে সামনে খুব কম যেতাম। আর পড়ালেখায় ফাঁকি দেয়ার কারনে,কপালে প্রায়ই পাতলা জোড়া বেতের হাল্কা/ভারী প্রহার তো ছিলোই। শিক্ষক মানুষ তো, বাবার কালেকশানে প্রচুর জোড়া বেত থাকতো। যাই হোক,সময় বদলায়,মানুষও বদলায়। আমরা বড় হবার সাথে সাথে অন্য এক বাবাকে পেলাম…বেশ হাসি খুশী, মাঝে মধ্যে মজা ফূর্তিও করেন নাতি-পুতিদের সাথে। অবশ্য ততদিন অর্থনৈতিক সংকট কেটে গেছে অনেকটা। মনে হয় এটা নিয়েই একটা বিরাট প্রেশার ছিল ভদ্রলোকের মাথায়। যাই হোক, কবে কোন ফাঁকতালে, কোন সুযোগে, আনন্দের আতিশয্যায় অথবা অপ্রাপ্তিতে বাবার গলা জড়িয়ে ধরেছিলাম, মনে নেই।

সম্ভবত আমার ঢাকার ফ্ল্যাটে গৃহ প্রবেশের দিন,সে কারনেই বোধ হয় ভদ্রলোক গলা জড়িয়ে ধরার প্রতিবাদ করেননি। এরপর থেকে আমি বাড়িতে গেলে কিংবা ভদ্রলোক ঢাকা এলে সুযোগ পেলেই গলা জড়িয়ে ধরতাম। এভাবেই চলছিলো অনেক গুলো বছর।দৃশ্যটা ভাবা যায়? সুযোগ পেলেই প্রায় ৫০ বছরের বয়স্ক ছেলেটা,তার ৯০ বছরের বাবার গলা জড়িয়ে ধরে আছে….!!’

এরপর চঞ্চল লিখেছেন, ‘আমার খুব ভালো লাগতো বাবাকে জড়িয়ে ধরে…বাবার বুকের ধুঁক ধুঁক আওয়াজটা আমার বুক দিয়ে অনুভব করতাম আর ভাবতাম, ঐ প্রাণ থেকেই এই প্রাণের জন্ম!! কি যে ভালো লাগা….! কি যে ভালো লাগা…….!! বাবাকে শেষ জড়িয়ে ধরেছিলাম মাস দুয়েক আগে,আমার বাসায়। তারপর বাবা বাড়ি ফিরে গেল। ৩০ দিন আগে ঢাকা ফিরলো অসুস্থ্য অচেতন অবস্থায়।হাসপাতালে বিছানায় অচেতন অবস্থায় ১৫ দিন থেকে, হারিয়ে গেল কোথায় যেন!! আর আমাদের গলা জড়িয়ে ধরা হলো না। জানিনা আবার কবে দেখা হবে, গলা জড়িয়ে ধরবো, আর চোখ বন্ধ করে অনুভব করবো এক প্রাণ থেকে আরেক প্রাণের জন্ম কিভাবে হয়েছিল!! গতকাল বাবার পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হলো। কত কত মানুষ এলো বাবার অনুষ্ঠানে! সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার বাবাকে আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন….বাবা, তুমি ভালো থেকো।‘

উল্লেখ্য, টানা দুই সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২৭ ডিসেম্বর চঞ্চল চৌধুরীর বাবা রাধা গোবিন্দ চৌধুরী মারা যান। অভিনেতার বাবা পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন।

Advertisement
Share.

Leave A Reply