fbpx

টাঙ্গাইল সমবায় মার্কেটের দোকান মালিকদের অবস্থান ধর্মঘট

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

টাঙ্গাইল সমবায় ব্যাংকের দূর্নীতি নিয়ে জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিটেট আদালতে একটি মামলা করেন মতিয়ার রহমান। পুরাতন দোকান মালিকদের পক্ষে এ মামলায় ব্যাংকটির ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সামনে আনা হয়। ৪৫০/২৩ নং মোকদ্দমায় সমবায় ব্যাংকের সংক্রান্ত মামলাটি তদন্ত করছেন টাঙ্গাইল সদর থানার এস আই ইমানুর। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলাটি নিয়ে এখনো কাজ শুরু করেননি তিনি। আদালত থেকে সময় নেওয়া আছে। সমবায় ব্যাংকটির টাকা আত্মসাতের বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন সমাজকর্মী রাহেলা জাকির।

তিনি বলেন, আত্মসাতের বিষয়ে যেখানেই বিচার চাইতে গেছি সেখানেই বড় একটা অনিহাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। গত মাসে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও, উল্টো দোকান বিক্রির অনুমতি দিয়ে ব্যাংকটির অবৈধ চেয়ারম্যান কুদরত এ এলাহীকে আরো দূর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে একটি সংস্থায় সদস্যদের সম্পদ লুট হবে তা কোনভাবেই মানা যায় না।

তিনি আরও জানান, ব্যাংকটির ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সমবায় অধিদপ্তর। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দূর্নীতির বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তাগিদ দিলেও কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন অধিদপ্তরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা।

অডিট রির্পোটে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ ধরা পরার পরও নতুন করে দূর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছে সমাবায় অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা। লুটপাটকৃত অর্থ আদায়ের কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বহুতল ব্যাংক মার্কেট নির্মাণ এবং বিক্রি বন্ধের আদেশ উঠিয়ে দিয়ে নতুন করে দূর্নীতির আরো সুযোগ করে দিয়েছেন অধিদপ্তরের ডিজি। এছাড়াও টাঙ্গাইল জেলা সমবায় অফিসের কুদরতের বিরোধী অবস্থানে থাকা অফিসারদের বদলি করে দিতে বেশ তোড়জোড় করছে অধিদপ্তরের ডিজি। বিশেষ করে সমবায় ব্যাংকের অডিট রির্পোট প্রকাশ হওয়ায় স্থানীয় অফিসের হাফ ডজন কর্মকর্তাকে টার্গেট করেছে অধিদপ্তর। এখন সেই সব কর্মকর্তারা যে কোন সময় বদলি হয়ে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল সমবায় ব্যাংকের সভাপতি পদে ২০১৫ সালে অবৈধ হয়েছেন কুদরত। কমিটির মেয়াদ শেষে এডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচনও দেওয়া হয়। মনোনয়ন বিক্রি নিয়ে দুপক্ষের মাঝে গোলযোগ সৃষ্টি হলে নির্বাচন স্থগিত এবং এডহক কমিটির বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেন কুদরত। সেই মামলায় নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। মামলার রায়ের সুযোগ নিয়ে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন কুদরত। অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে করা কুদরতের মামলার বিষয়টি ইচ্চাকৃতভাবে ঝুলিয়ে রাখে অধিদপ্তরও। এমন সুযোগ নিয়ে কুদরত সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদে অবৈধ আছেন গত ১০ বছর থেকে। তিন বছর পর পর সমবায় ব্যাংকটির নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও অধিদপ্তরের স্পষ্ট সহযোগিতায় পদে থেকে গ্রাহকের টাকা আত্বসাত করতে কোন বেগ পেতে হচ্ছে না কুদরতের। এ নিয়ে পুরাতন ব্যবসায়ী বা সমবায়ীদের পক্ষ থেকে অর্ধ শতাধিক মামলা হলেও চোখ বুঝে কুদরতকে সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের নিজস্ব শূন্য দশমিক ৮১ একর জায়গার ওপর একটি দ্বিতল মার্কেট ভবনে ১৫৫ জন ব্যবসায়ীকে মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ওই ১৫৫ জন ব্যবসায়ী বরাদ্দকৃত দোকানে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। অভিযোগ আছে, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি কুদরতের সঙ্গে সখ্য করে পারস্পরিক যোগসাজশে সমবায় ব্যাংকের তহবিল তছরুপ করাসহ মার্কেট ভবন নির্মাণের নামে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ করে দেন সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. তরুন কান্তি বিশ্বাস। অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, কুদরতকে ব্যবহার করে অধিদপ্তরের এই শীর্ষকর্তা নানা সুবিধা নিয়েছেন, নতুন করে আরো সুবিধা নিতে মার্কেটের ৪,৫ ও ৬ তলার দোকান বিক্রির আদেশ দিয়েছেন। ডিজি এমন একটি সময়ে কুদরতকে দোকান বিক্রির সুযোগ দিয়েছেন যখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কুদরত এর দূর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ডিজি কুদরত এর দূর্নীতির বিষয়টি আমলে না নিয়ে উল্টো অধিদপ্তরকতৃক স্থগিত থাকা আদেশ উঠিয়ে নেন।

এ নিয়ে সমবায় অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কুদরত এর অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আমলে না নিয়ে মহাপরিচালক দোকান বিক্রির স্থগিত আদেশটি উঠিয়ে নিয়ে নতুন করে দূর্নীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। সংসদীয় কমিটিতে কুদরতের পদে থাকার বৈধতার বিষয়টি নানা ভাবে পাশ কাটিয়ে উল্টো কুদরতকে দূর্নীতি করার সুযোগ দেওয়ার পিছনে নিশ্চয় কোন যোগসাজস আছে।

কুদরত এর দূর্নীতি এবং পদে থাকার বিষয়ে জানতে সমবায় অধিদপ্তরের ডিজিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

টাঙ্গাইল সমবায় ব্যাংকের সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ঠিকাদারকে ধার এবং কোর্ট খরচের নামে ৯ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমবায় ব্যাংকের আওতাধীন পৌর সুপার মার্কেটের দোকান বরাদ্ধ থেকে আরো কোটি টাকা অবৈধভাবে তিনি নিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন দোকান মালিকরা।

টাঙ্গাইল সমবায় মার্কেটের দোকান মালিকদের অবস্থান ধর্মঘট

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুদরৎ এ এলাহি তার পরিষদকে পাশ কাটিয়ে চাচাতো বোন জামাই দিদারুল ইসলামকে দিয়ে সমবায় ব্যাংকের একটি অবৈধ ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছেন। এ হিসাব পরিচালনা করেন কর্মচারি দিদার এবং কুদরৎ নিজে। যার হিসাব নং- ০২০০০১৮৯৫৯১০। সূত্র জানায়, গত ৫ মাসে এ হিসাব থেকে কুদরত প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। আইন লঙ্গন করে দিদারকে সই-সাবুদের ক্ষমতা দেওয়ায় লেন-দেন করতে জবাবদিহি করতে হয় না চেয়ারম্যানকে। এছাড়া সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কুদরৎ সভাপতি হিসেবে সমবায় ব্যাংকের তহবিল থেকে ঠিকাদারকে ধার দিয়েছেন ৬ কোটি ৮৫ হাজার ৬ শত ৩৪ টাকা। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমবায় ব্যাংকের কাছে ৫ বছর আগের পাওনা এখনো বুঝে পায়নি। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বলেন, কুদরৎ সাহেব আমার ৫ বছর আগের পাওনাই দিচ্ছেন না, ধার দিবেন কেন? আমার কাজের টাকা আদায়ের জন্য আমি বার বার তাগাদা দিলেও নানা টালবাহানা করছেন চেয়ারম্যান।
অডিট রিপোর্ট সূত্রে আরো জানা যায়, বিভিন্ন ভাবে মামলা পরিচালনার জন্য কুদরৎ এ এলাহি আইনজীবী খরচ হিসেবে ৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এ অবিশ্বাস্য লেনদেন নিয়ে সমবায় কর্মকর্তারাও প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয় অফিসের কর্মকর্তারা। কুদরত এর ব্যপালেই বদলিসহ শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

এদিকে টাঙ্গাইল সমবায় মার্কেটের ১৫৫ জন দোকান মালিক তাদের উচ্ছেদকৃত দোকান ফেরত পাওয়ার দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন।

১০ মে সকাল থেকে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালেয় এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।

টাঙ্গাইল সমবায় মার্কেটের দোকান মালিকদের অবস্থান ধর্মঘটতারা জানান, ১৯৮০ সাল থেকে টাঙ্গাইলের পুরাতন আদালত পাড়ায় সমবায় সুপার মার্কেটে পজিশন কিনে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুদরত ই এলাহী তাদের উচ্ছেদ করেন। পরবর্তীতে তারা একটি উচ্ছেদ মামলা করেন। মামলা নম্বর ৪০০৯/২০১৪। এরই মধ্যে কয়েক দফায় জেলা প্রসাশকের উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সমবায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুদরত ই এলাহী অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দোকানের পজিশন বিক্রি করে দিচ্ছেন। দোকান বরাদ্ধের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।

তাদের দোকান ফেরত দেওয়া না হলে এই ধর্মঘট অনির্দিষ্ট কালের জন্য চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।

Advertisement
Share.

Leave A Reply