fbpx

তায়েব মিল্লাত হোসেনের কবিতা ‘আমাদের মা’

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

তায়েব মিল্লাত হোসেন, অভিষেক বিক্রমপুরে, ১২ জানুয়ারি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ। পেশাজীবনের সূচনা সংবাদপত্রে। দৈনিক, দূরদর্শন, অন্তর্জাল, সাপ্তাহিক নানান মাধ্যমে কাজ করেছেন, এখনও করছেন। কবিতা, কথাশিল্প, সমালোচনা, গবেষণা, ঢাকা আর ভোজনশিল্প নিয়ে তায়েব মিল্লাত হোসেনের আগ্রহ অসীম। বিবিএস বাংলা’র পাঠকদের জন্য এই সৃষ্টিশীল প্রাণ লিখেছেন কবিতা ‘আমাদের মা’।

মা আর পারছিলেন না
তবু টানছিলেন এক দঙ্গল সন্তান
আগেই খুইয়েছেন হাতের বালা, গলার হার, কানের দুল
এদিকে আমরা মুখস্থ করছি-
‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’

আজ মায়ের মুখ মনে পড়ে মইনুলের
পাঁচ কেজি মোটা চাল যেদিন হারিয়ে গেলো থলে থেকে
মিললো না ধারের পয়সা
সেই ভুখা দিনে মইনুল শপথ নিয়েছিলো-
হাভাতে রইবে না আর
ঢাকা যাবে
সরু চালের কড়ি কামাবার কায়দা জানবার তাগিদে
তারপর হাঁটতে হাঁটতে শহরের গলি পেলো
চিনলো কবর ও কঙ্কালের ভেতর
লালনীল বাতির মুখোশ
জ্ঞান পেলো রতি-রাত-গন্দমের
যাবতীয় প্রগতি সরণির
রাজপথ পার হওয়ার আদবও জানা হলো
কে কার আগে কাকে ল্যাং মেরে
সামনে তাকাবে নয়তো পতন আসন্ন তোমার
অতীতের ঋণ শোধে কার হাত পাতা
গৌরব দান করে রোজ রোজ
কেমনে তেলপানিঘৃতেও মিলন হতে পারে
এইসব সূত্র জেনে নিয়ে
পাক্কি বিরিয়ানিতে হাত পাকানোর
রহস্যভেদী গোয়েন্দা হতে হতে
ওস্তাদদের আদর আদায় করে নিতে হয়
পৃথিবীর যাবতীয় মাখনের কৌটো হাজিরনাজির করে
ডাকের অনেক আগে-
এভাবে এভাবে এসব বেঁচে থাকা
মরে যাওয়া জীবনের মতো
যেমন রোদের দরদ রোবটের অজ্ঞাত আজো,
আজো অজ্ঞাত ভিটামিন ডির অসীম আকাশ
ওহে মইনুল অবকাশ পেলে
জেনে নিও ধানের জিনতত্ত্ব
নতুন একটা চালের আকাল আজকাল পোড়ায় খুব
চিনিবিনাশী ভাতের উদ্ভব হবে কবে আর,
কবে আর ভাত তুমি-
সুচেতনার আঁশময় সুষম খাদ্যতালিকা হবে,
উপহার দিবে শূন্যতার কোমড়ে
সুখী এক নিঃসঙ্গ নিম
কিংবা তালতনুর কেতাময় পাটাতনে
হেঁটে চলা বেড়ালের মতো
নরম কোমল আলো নিয়ে
পারির রমণী সকল।

জানি পারবে না, পারবে না
তোমরা সেই সত্য আবিস্কারে নেই
অথচ যে ছেলেটা
এক মুঠো ভাতের খোঁজে
এই শহরে এসেছিলো
তাকে এখন শিল্পকলার অজুহাত হতে হয়
দিতে হয় শৃঙ্খল ও সুগঠিত থাকার দোহাই,
সে-ও যেনবা অগ্নিযুগে ঢাকা অনুশীলন সমিতি
মুগুর ও ডনে বুকের ছাতি নিয়ে
স্বদেশি সময়ের সেই মহানায়ক
এদিকে একালের ছয়ের ভাঁজেও বেশ মুখোশ
অতীতমুখিনতা বেমানান দুনিয়ায়
মোটা-মুটি রঙ্গালয়ের যাত্রার মতো
বেহুদা চরিত্র হয়ে এই বেঁচে থাকা।

তাই মইনুল তুমি আর বাজারে যেওনা
মাথায় নিও না চালের থলে
টাকা গুছিয়ে রেখো
ওরা উপহাস করবে নয়তো
তোমার মাকে ‘হাঁড়িশূন্য চুলার জননী’ বলে।
তুমিও আর বলবে না কোনোদিন-
‘মা ভাত দাও, ক্ষুধা পেয়েছে।’

মইনুল চুপ করে থাকো-
কলাপাতার পায়েস জয়ী
তুমি এক ভাতমুক্ত রুটির দুনিয়া
বরং এবেলা উপোস যাও
একবার ডাকলেই খেতে
সেই শৈশব ফিরবে না
রাগ ও পানির দামে মিশে শহরে রয়ে যাও
নয়তো উদ্বাস্তু হবেন তোমার জননী, আমাদের মা।

১৮ মাঘ শীত ১৪২৭
উত্তর বাড্ডা, ঢাকা

Advertisement
Share.

Leave A Reply