fbpx

তুঘলকি কারবার!

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

আল মারুফ রাসেল। জন্ম ১৯৮৬ সালের ২৩ নভেম্বরে পুরনো ঢাকায়। শৈশব-কৈশোর কেটেছে কলাবাগানে। পড়াশোনা প্রত্নতত্ত্ব ও আলোকচিত্র নিয়ে। সাংবাদিকতার শুরু ২০০৫ সালে সমকাল পত্রিকায়। পরিবেশ নিয়ে কাজ করেছেন সুন্দরবন বাঘ প্রকল্প ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার অ্যাণ্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস (আইইউসিএন)-এ। তিনি ‘দ্য বঙ্গ প্রজেক্ট’ নামে একটি ইতিহাস গবেষণা উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। একইসঙ্গে মারুফ ‘হেরিটেজ ওয়াক ঢাকা’ সংগঠনেও যুক্ত। এবারের বইমেলায় দিব্য প্রকাশ থেকে বের হয়েছে তার অনুদিত বই ‘মুহাম্মাদ বিন তুঘলক উত্থান ও পতন’। বিবিএস বাংলা’র পাঠকদের কাছে এরই নেপথ্য গল্প বলেছেন আল মারুফ রাসেল।

২০১৯ সালের হেমন্তের দিনগুলোতে দিল্লির অলিগলি ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। কিছুটা পেশাগত কারণে, কিছুটা রসনাবিলাসে আর অনেকটাই নিজস্ব অন্য এক বইয়ের গবেষণার তাগিদে। অন্যসব এলাকার সঙ্গেই তুঘলকাবাদ, জাহানপানাহ, ফিরোজ শাহ কোটলা, হাউস খাস এলাকায় ঘুরেছি। তুঘলক শাসনামলের স্থাপনাগুলো কেবলই বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে মনে।

ঘরে ফিরে বইপত্র যোগাড় করে লেগে গেলাম সুলতানি দিল্লির ইতিহাস নিয়ে। এ সময়কাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে, বলা হয় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা-বৈষম্যের কথা, অত্যাচারী মুসলিম শাসকদের কথা। আসলেই কি তাই? হুট করে একটা ভূখণ্ড দখল করলেই কি আর শাসক হওয়া যায়? নাকি টিকে থাকে সে সাম্রাজ্য? তাই এই ব্যাপারগুলো নিয়ে সংশয় দূর করার তাগিদেই পড়াশোনার শুরু- দিল্লি সালতানাত নিয়ে।

ইতিহাস সবসময়ে যেহেতু বিজয়ীদের বানানো, বা পরবর্তী কালের সংখ্যাগুরুদের খেলনা হিসেবে রয়ে যায়, তাই সব প্রপাগাণ্ডা, মিথ, গালগল্প যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে বৈ কি! মুই’জ উদ-দিন মুহাম্মাদ ঘুরির দিল্লি দখল, দিল্লির সিংহাসনে একমাত্র নারী হিসেবে সুলতান রাজিয়াত-উদ-দুনিয়া ওয়াদ-দিনের সিংহাসনে আরোহণের পর আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুঘলক শাসনামলের শুরু। খলজি শাসকেরা যখন দিল্লির সিংহাসনকে দূর্বল করে দিয়ে গেলেন, তখনই এই বংশের উত্থান। আর বাংলার জন্যও গৌরবের এই কারণে যে এই সময়কালেই স্বাধীন বাংলা সালতানাতের প্রতিষ্ঠা হয়। তাই এই সময়টা নিয়ে আগ্রহ বাড়তে থাকে। পড়াশোনা চলতে থাকে তুঘলকি কারবার নিয়েও।

মুহাম্মাদ বিন তুঘলক ছিলেন এই বংশের সবচেয়ে প্রভাবশালী শাসক। একই সঙ্গে অজনপ্রিয়ও। তখনকার সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান আর সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তার বিচরণ ছিল। এমনকি শল্যবিদও ছিলেন। ছন্দ নিয়ে তার জ্ঞান ছিল অসাধারণ, কবিতা লিখতেন, সাহিত্য সমালোচনা করতেন, নিজের জীবনী লেখার কাজেও হাত দিয়েছিলেন। প্রথম জীবনে দার্শনিক প্রভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী, আর তারপর কট্টর মুসলিম। সুফী সাধক আর পণ্ডিতদের সঙ্গে ছিল তার ওঠাবসা। তার সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও প্রশাসক হতেন। আর কৃষিখাত তো পুরোটাই ছিল গ্রামীণ হিন্দু সমাজের হাতে। তারপরও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি হিন্দুদের চাকরিচ্যুত করেছিলেন। অবশ্য উলামারাও পাল্টা অভিযোগ করেছিল সে সময়েই যে তার ধর্মনাশ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই, কিন্তু সেসব অভিযোগের কতটা যুক্তিসংগত আর সত্য সেটাও বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে।

রাজধানী স্থানান্তর, টোকেন কারেন্সির প্রচলন, খুরাসান আক্রমণের পরিকল্পনা, দোয়াব এলাকায় কর বৃদ্ধি ইত্যাদি। ইসামি, বারানি, ইবনে বতুতার কথাগুলোও আঁতশী কাঁচের নিচে একবার ফেলতেই হয়। আর এটার জন্য চমৎকার বই ছিল আগ্রা কলেজের ডক্টর আগা মাহদি হুসাইনের রাইজ অ্যান্ড ফল অফ মুহাম্মাদ বিন তুঘলক।

বইয়ে তুঘলক বংশের উত্থানের পটভূমি থেকে মুহাম্মাদ বিন তুঘলকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ অনেকটাই যুক্তির নিরীখে দেখানো হয়েছে। তাই দিব্যপ্রকাশের কর্ণধার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও স্কুলের বড় ভাই মাইনুল আহসান সাবের অনুরোধ করলেন এই বইটা অনুবাদের তখন আর না করতে পারিনি। ইংরেজিতে যেখানে পাগলা রাজা তুঘলককে নিয়ে কাজ হাতে গোণা, সেখানে বাংলায় তো আরও ভয়াবহ। তাই লেগে গেলাম অনুবাদে। তবে শেষে নিজের লেখা একটা অধ্যায় জুড়ে দিয়েছি। তুঘলক আমলে অভিজাতদের উৎসব ও ভোজ নিয়ে। খাবার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে এ নিয়ে ও উৎসব নিয়ে লেখার সুযোগটা হাতছাড়া করিনি।

বইটি পেতে হলে:

দিব্য প্রকাশের ফেসবুক পেজে https://www.facebook.com/দিব্যপ্রকাশ-Dibyaprakash-55 বিকাশের মাধ্যমে।

রকমারি ডট কম (https://www.rokomari.com/book/212501/muhammad-bin-tughluqe)

গ্রন্থিকের ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/gronthik.com19)

Advertisement
Share.

Leave A Reply