পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে তৎকালীন বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ করেন বাহিনীর কিছু সদস্য। চলে নারকীয় হত্যাকাণ্ড। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহ শেষে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। যে হত্যা মামলার বিচার আজও পূর্ণতা পায়নি।
মামলার গতিপথ
নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ‘পিলখানা হত্যা’ মামলা হিসেবে পরিচিত ওই মামলায় আসামি ছিলেন ৮৫০ জন। বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। আর খালাস পান ২৭৮ জন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে অনুমোদনের জন্য আসে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ অন্যরা খালাস পান।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর গত ডিসেম্বর ও চলতি বছর রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল দায়ের করে।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ গত ডিসেম্বরে লিভ টু আপিল দায়ের করেছে। আসামিপক্ষও সরাসরি কয়েকটি আপিল ও লিভ টু আপিল দায়ের করে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষের আপিলের শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এসময় তিনি আরো বলেন, লিভ টু আপিলগুলো আগামী মাসে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা সাবেক ডিএডি সৈয়দ তৌহিদুল আলমসহ দণ্ডপ্রাপ্ত সাড়ে তিন’শর বেশি আসামির আইনজীবী ছিলেন মো. আমিনুল ইসলাম।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়া ও আপিল প্রস্তুত হওয়া সাপেক্ষে চলতি বছর আপিল ও লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বিস্ফোরক আইনে বিচার
এছাড়াও বিস্ফোরক আইনে করা মামলার বিচার এক যুগেও শেষ হয়নি। এ মামলায় ১ হাজার ৩৪৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
বাহিনীর নিজস্ব বিচার
বাহিনীর নিজস্ব আইনে বিডিআরে বিদ্রোহের ঘটনায় বিচার হয় অধিনায়কদের সামারি ট্রায়ালে (সংক্ষিপ্ত বিচার)। তাতে ১০ হাজার ৯৭৩ জনের বিভিন্ন ধরনের সাজা হয়। তাদের মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অন্যরা প্রশাসনিক দণ্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগ দেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে সারা দেশে বিশেষ আদালত গঠন করে বিচার করা হয়। বিশেষ আদালতে ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জন জওয়ানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। বিচার চলার সময় মারা গেছেন ৫ জন।