প্রথমবারের মত গাছেদের কথোপকথন রেকর্ড করেছে একদল জাপানি বিজ্ঞানী। জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের আণবিক জীববিজ্ঞানী মাসাৎসুগু টয়োটার নেতৃত্বে সম্প্রতি গাছের যোগাযোগ প্রক্রিয়া গবেষণা রেকর্ড করার দুর্দান্ত সাফল্যের এক ভিডিও প্রকাশ করেছে নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নাল। মাসাৎসুগু টয়োটার সাথে গবেষকদের দলে ছিলেন পিএইচডি ছাত্র ইউরি আরতানি এবং পোস্টডক্টরাল গবেষক তাকুয়া উমুরা।
ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্থ গাছগুলো তাদের আহত প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বার্তা পাওয়া মাত্রই পাতায় ক্যালশিয়াম সংকেতের বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
If #plants could talk, they’d do so thru chemical signals about predators (aphids, caterpillars, gardeners with shears/pesticides…). Plants CAN talk (which we’ve known), but molecular biologists at Saitama University in Japan caught it 1st on film. https://t.co/44gXzMerK5 pic.twitter.com/DcLAlV1iti
— HoneyGirlGrows (@HoneyGirlGrows) January 20, 2024
গবেষণার সমীক্ষা বলছে, পোকামাকড়ের আক্রমণ বা আঘাত পেলে কিছু গাছ ভোলাটাইল অরগানিক কম্পাউন্ড (ভিওসি) বা উদ্বায়ী জৈব যৌগ নিঃসরণ করতে পারে। এই পদার্থ অন্যান্য গাছের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে এই গবেষণায় পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষণার প্রক্রিয়া চলাকালীন যোগাযোগের মুহূর্তকে ধারণ করার জন্য, বিজ্ঞানীরা বিশেষ একধরণে বায়ু পাম্প ব্যবহার করেছেন। একটি বাক্সে গাছের পাতা এবং শুঁয়োপোকা রেখেছিলেন এবং অন্যটিতে সরিষার অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা নামক আগাছা। শুঁয়োপোকাকে টমেটো গাছ এবং অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা থেকে কাটা পাতা খেতে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় বিপদ সংকেতগুলো দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল অ্যারাবিডোপসিস উদ্ভিদ। আর সেই মুহূর্তই ক্যামেরায় ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকদের মতে, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া বা তৃণভোজী কোনো প্রাণীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিবেশী উদ্ভিদ যখন ভিওসি নিঃসরণ করে। ভিওসির সংস্পর্শে আসা পাতাগুলো সুস্থ আগাছাগুলোয় যে সংকেত পাঠায়, তা গবেষকেরা ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। এই ধরনের যোগাযোগ বিভিন্ন হুমকি থেকে গাছপালাকে রক্ষা করে।
এছাড়াও ওই পরীক্ষায় একটি বায়োসেন্সর যোগ করেছিলেন যা উজ্জ্বল সবুজ এবং ক্যালসিয়াম আয়ন সনাক্ত করেছিল বিজ্ঞানীরা। জিনগতভাবে অ্যারাবিডোপসিস গাছগুলো ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) পেলে সবুজ রঙের প্রতিপ্রভা (ফ্লুরোসেন্স) বিকিরণ করে। এটি স্ট্রেস বা কষ্টের অনুভূতির বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে।
এ বিষয়ে মাসাৎসুগু টয়োটা বলেন, কখন, কোথায় ও কীভাবে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত প্রতিবেশীর (উদ্ভিদ) কাছ থেকে বায়ুবাহিত ‘সতর্কবার্তা’পায় এবং তাতে সাড়া দেয়, তার জটিল প্রক্রিয়াটি অবশেষে আমরা উন্মোচন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লুকানো এই ইথারিয়াল যোগাযোগ প্রক্রিয়াটি একটি সময়োপযোগী পদ্ধতি যা আসন্ন হুমকি থেকে প্রতিবেশী গাছপালাকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।‘