fbpx

বাঁক বদলের কবি আল মাহমুদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণীর উচ্ছেদ,
এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ।…
(সোনালী কাবিন)

এই কবিতার কবি আল মাহমুদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলা কবিতার এই নক্ষত্র ২০১৯ সালের এই দিনে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

কবি আল মাহমুদের পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতা রওশন আরা মীর।

কবি আল মাহমুদ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাইস্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। তবে তার বেড়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শৈশবেই লেখালেখির শুরু। তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। লেখার এই তাড়না তার থামেনি আমৃত্যু।

সংবাদপত্রে লেখালেখি সূত্রে ১৯৫৪ সালে ঢাকায় আসেন আল মাহমুদ। সাপ্তাহিক কাফেলা’য় কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি নির্মতার শহরে জীবিকা মেটাতে কবি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’। শুরুতেই আলোড়ন তোলে তার এই সৃষ্টি। বাংলাভাষীরা টের পান এক বিপুল কবিস্বত্ত্বার পদধ্বনী। এরপর ১৯৬৬ সালে বের হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কালের কলস’। মফস্বল থেকে আসা প্রাতিষ্ঠানিক সনদহীন এ কবিকে প্রথমে মেনে নিতে পারেনি নাক উঁচু নাগরিকেরা। তবে প্রথম প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আল মাহমুদ ভারতে চলে যান। সক্রিয়ভাবে অংশ নেন বাঙালির জাতির মুক্তির লড়াইয়ে। স্বাধীন দেশে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিষ্ঠা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালীন তৎকালিন সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় এই কবিকে।

বাংলা কবিতার বাঁক বদলের রূপকার হিসেবে গ্রাহ্য হন কবি আল মাহমুদ। সাহিত্যে তার রাজনীতি, দ্রোহ, গ্রামীণ বাংলার উপকরণ, ধর্ম বিশ্বাস, প্রেম, কাম সব কিছুই সৃষ্টিকর্মকে অনন্য করে তোলে।

কবির উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে আছে লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬), আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না, Al Mahmud In English, দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, একটি পাখি লেজ ঝোলা, পাখির কাছে ফুলের কাছে, আল মাহমুদের গল্প, গল্পসমগ্র, প্রেমের গল্প, যেভাবে বেড়ে উঠি, কিশোর সমগ্র, কবির আত্নবিশ্বাস, কবিতাসমগ্র, কবিতাসমগ্র-২, পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধ বণিক, ময়ূরীর মুখ, না কোন শূন্যতা মানি না, নদীর ভেতরের নদী, পাখির কাছে ফুলের কাছে, প্রেম ও ভালোবাসার কবিতা, প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা, প্রেমের কবিতা সমগ্র, উপমহাদেশ, বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ, উপন্যাস সমগ্র-১, উপন্যাস সমগ্র-২, উপন্যাস সমগ্র-৩, তোমার গন্ধে ফুল ফুটেছে (২০১৫), ছায়ায় ঢাকা মায়ার পাহাড় (রূপকথা), ত্রিশেরা, উড়াল কাব্য।

আল মাহমুদ ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাদিরা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।

আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬), কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), ভানুসিংহ সম্মাননা পদক (২০০৪), লালন পুরস্কার (২০১১)সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন জীবন জুড়ে।

২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে ঢাকার ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতা‌লে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবি আল মাহমুদ শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

বাঙালির মননে ও জীবনে তার প্রভাব তবু শেষ হবেনা কোনো দিন। আসছে একুশে ফেব্রুয়ারিতেও সৃষ্টিগুণে দারস্থ হতে হবে তার কবিতায়। যাতে পরে সুরারোপ করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।

‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।

হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !

প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।

চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?

পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।

প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।

– একুশের কবিতা, আল মাহমুদ

এমনই এক উচ্চতার আসনে আসীন কবি আল মাহমুদ। প্রয়াণ দিবসে কবির প্রতি অজর শ্রদ্ধা।

Advertisement
Share.

Leave A Reply