fbpx

বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্ত

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

অদিতি ফাল্গুনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে সম্মান ও স্নাতকোত্তর। কাজ করেছেন একাধিক ইংরেজি সংবাদপত্র, প্রকাশনা সংস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায়, বাংলা একাডেমির অনুবাদ বিভাগ ও জাতিসংঘে। এখন নেদারল্যান্ডসের এআরআলটি ফাউন্ডেশনে সমাজবিজ্ঞানে অন্তর্জালে পড়া-শোনার পাশাপাশি ইউএন ওমেনে পরামর্শক ও অনুবাদক হিসেবে কাজ করছেন। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-অনুবাদ ও শিশুতোষ গ্রন্থ মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩২। ২০১১ সালে সৃজনশীল শাখায় প্রথম আলো বর্ষসেরাসহ জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন মোট চারটি সাহিত্য পুরষ্কার।

‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ অন্ধবেগে ধেয়ে চলে আসে
বাধাবন্ধহারা
গ্রামান্তরে বেণুকুঞ্জে নীলাঞ্জনছায়া সঞ্চারিয়া
হানি দীর্ঘধারা।
বর্ষ হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এল সমাপন,
চৈত্র অবসান—
গাহিতে চাহিছে হিয়া পুরাতন ক্লান্ত বরষের
সর্বশেষ গান।’

: বর্ষশেষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শাহজাদপুর বা শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ যে গ্রামগুলোয় থেকেছেন, সেই গ্রামগুলো একবার করে ঘুরলেও গল্পগুচ্ছের অনেক গল্পের বা রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতার অনেক চিত্রকল্পের দৃশ্যপট ধরে ফেলতে আমাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। যেমন, ‘কল্পনা’ কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ষশেষ’ কবিতাতেই যেখানে ‘নবাঙ্কুর ইক্ষুবনে এখনো ঝরিছে বৃষ্টিধারা বিশ্রামবিহীন’ পড়া মাত্রই উত্তর বাংলার অনেক গ্রামে বিস্তীর্ণ আখক্ষেতের সারি আপনার মনে পড়বে।

চৈত্রের পিঙ্গল ধূলিঝড়ের পরেই বৃষ্টির যে ধারা নামে বা কখনো শিলাবৃষ্টি ধেয়ে নামে, সেই বৃষ্টি আখগাছের পাতায় কিভাবে ঝরে, বাবার সরকারি চাকরির সুবাদেই বেশ কিছু মফস্বল এলাকায় শৈশবে ঘোরার কারণে সেসব দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। কেমন এই কালবৈশাখী? কতটা সুন্দর সে?

বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্ত

‘আসছে এবার অনাগত প্রলয় নেশায় নৃত্য পাগল
সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক ভেনে ভাঙলো আগল
মৃত্যুগহন অন্ধকুপে মহাকালের চন্ডরূপে ধূম্রধূপে
বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর
ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’

বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্ত

নজরুল কী না ব্যাখ্যা করেই দিয়েছেন কালবৈশাখী ঝড়ের অবিশ্বাস্য অবিনাশী রূপ! সেখানেই থামেননি তিনি। ঝড়ের রূপের বিবরণে তিনি আরো বলছেন, ‘দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়/ দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়।’ আর এটুকু শুনতে শুনতে বা পড়তে পড়তেই মগধ বা বিহার থেকে বাংলা অবধি ব্যাকরণের কঠিন প্রকরণে হাঁস-ফাঁস সংস্কৃত থেকে মুক্তিপিয়াসী অথবা সমাজে নিচু অবস্থানের কারণেও সংস্কৃত নামের দেবভাষায় অভিগম্যতাহীন নারী বা শুদ্রের মত প্রাকৃতজনের মুখের ভাষা প্রাকৃত, মৈথিলী, ব্রজবুলি বা পূর্বী অবহটঠির মত যে নানা কথ্য ভাষা ইতিহাসের যে সময়টায় তৈরি হচ্ছিল এবং গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং যজ্ঞ-বেদ-ব্রাম্মণের কঠিন নিয়ম প্রাচীরের উত্তরে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা পালিতে লিখছেন তাঁর নতুন নীতি গ্রন্থগুলো, তেমনি সেই নতুন ভাষাগুলোর কোনো একটিতে এক নারী পিঙ্গল ঝড় আসার আগে জানাচ্ছেন তার বাসনা, ‘সো মোর কান্তা দূর দিগন্তা/ মধু আবে আবে চুলায় রে।’ প্রাবৃষ বা গোধূলিকাল উপস্থিত। কান্ত গেছে বহু দূর। নারীটি কাপড় মেলেছেন ঘরের কোণে। আর তখনি ঝড় আসছে। নারীটি কাপড় তুলবেন। আর এর সাথেই কল্পনা করুন লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখার সেই বিশেষ মূহুর্তটিকে! মার্কেজ যেহেতু বিশ্বাস করতেন যে, ভালো লেখকের কাজ হচ্ছে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কাহিনীকে সবচেয়ে বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপন করা অথচ তার একটি আখ্যানে একজন নারীকে আকাশে ওড়ানোর দৃশ্যটা কিভাবে লিখবেন সেটা ভেবে পাচ্ছিলেন না, তখনি একদিন এক প্রতিবেশিনী নারীকে দেখলেন শেষ বিকেলের হু হু বাতাসে উড়ে যেতে থাকা অসংখ্য কাপড় তোলার সংগ্রামে মরীয়া। হু হু বাতাস আর অসংখ্য উড়তে থাকা কাপড়ের মাঝে সেই নারীটিকে মনে হচ্ছিল যেন সে নিজেই উড়ে যাচ্ছে। মার্কেজের আর সমস্যা হলো না দৃশ্যটা আঁকতে! ঠিক যেমন রবীন্দ্রনাথের গানে কোনো নারী বলেন, ‘ঝড়ে উড়ে যায় আমার মুখের আঁচলখানি!’

বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্ত

সাহিত্য থেকে এবার একটু চলচ্চিত্রে যাই। সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’য় বয়সে অনেক বড় ও সদা কর্মব্যস্ত ভূপতির স্ত্রী চারু। শিক্ষিতা, নি:সন্তান স্ত্রী চারু যখন সারাদিন বই পড়ে বা সেলাই করেও সময় কাটাতে পারে না, খবরের কাগজের সম্পাদক স্বামীকে তাকে দেখতে হয় দূরবীণ দিয়ে, তখনি কেন অমলরূপী তরুণ সৌমিত্র’র আগমন ঘটলো ঠিক এক ঝড়ের মূহুর্তে? অমল বা সৌমিত্রর আগমন অন্য যেকোনো দৃশ্য দিয়ে দেখানো যেত। কিন্তু চারুর জীবনে পাশাপাশি বয়সী তরুণ অমলের উপস্থিতি তার নিস্তরঙ্গ, গুমোট জীবনে এক ঝড়ই ঘনিয়ে আনবে। সেই ঝড়ের পূর্বাভাসই এঁকেছেন চলচ্চিত্রকার।

বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্ত

একইভাবে রবীন্দ্রনাথের গীতি ও নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’য় যে চিত্রাঙ্গদাকে তার পুত্র সন্তানহীন বাবা ছেলের পোশাকে ও রণকুশল করে বড় করে তুলেছেন, যে চিত্রাঙ্গদা কিনা শিকারে যায়- সেই চিত্রাঙ্গদাই একদিন শিকারের সময় বনপথে তপস্বীবেশী অর্জুনের মুখে ‘বালকের দল’ শব্দ-বন্ধের ভৎসনায় নিজের ভেতরের নারীসত্বাকে প্রথম অবমানিত বোধ করে। অর্জুন নিজের পরিচয় জানিয়ে বালকের দলকে অভয় জানিয়ে মা’র কোলে ফিরে যেতে বললে রাজকুমারী তাকে দ্বন্দ-যুদ্ধেও আহবান জানালেন। অর্জুন সে প্রস্তাবও কৌতুকভরে ফিরিয়ে দিলে বালিকাসত্বা থেকে নারীসত্বায় প্রবেশের পথে চিত্রাঙ্গদা তার সখীদের সাথে ‘ওরে ঝড় নেমে আয়, আয় রে আমার শুকনো পাতার ডালে, এই বরষায় নবশ্যামের আগমনের কালে’ বলে নৃত্য করেন। এই দৃশ্যের পরই চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের কাছে নারী হিসেবে আবেদন জানিয়েও প্রত্যাখ্যাত হবেন এবং তারপরই প্রেমের দেবতা অতনুর কাছে বর চাইবেন এক বছরের জন্য তাকে যেন পরমা রূপবতী করে দেয়া হয়। আবার ওপার বাংলার অকাল প্রয়াত চলচ্চিত্রকা ঋতুপর্ণ ঘোষ ‘চিত্রাঙ্গদা’র অভূতপূর্ব নতুন ব্যাখ্যা দান করেছেন। অতনুর কাছে রূপবতী নারী হিসেবে বর চাওয়া ও অর্জুনের সুখী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার সেই একটি বছর নিজ রাজত্বে ছিলেন না এই রাজকুমারী। জনতা জানতো যে, ‘তীর্থে গেছেন তিনি গোপন ব্রতধারিনী!’

ঋতুপর্ণ ঘোষ তার সিনেমায় সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন যে, এটা কি কোনো রূপান্তরকামী পুরুষের দেহে কোনো অস্ত্রোপচার বা পুরুষ থেকে নারী হবার অমানবিক সংগ্রামের সময় লুকিয়ে থাকার কোনো কাহিনী? সিনেমায় পরিচালক ঘোষ নিজেই জেন্ডার চেঞ্জ সার্জারিতে যাচ্ছেন। বাবাকে বলছেন তাকে যেন ‘ডটার’ বলা হয়। এও তো গোটা সামাজিক প্রথা ও জেন্ডার বিষয়ক আমাদের বাইনারি ভাবনাকে কাঁপিয়ে দেয়া এক ঝড়।

বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্ত

একটি গল্প লেখার প্রস্তুতি হিসেবেই কিছুদিন আগে ট্রান্স-জেন্ডার সেবিকা ও বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হো চি মিন ইসলামের সাথে আলাপের সময় এই ভাবনাগুলো মাথায় আরো বেশি এসেছিল। আমরা জানি আজো আফগানিস্তানে ‘বাচে পশ’ নামে এক ধরনের প্রথা আছে, যেখানে পুত্র সন্তান নেই এমন দম্পতি বেশ কয়েকটি কন্যা সন্তানের ভেতর থেকে একজনকে ছেলের নামে ও ছেলের সাজ-পোশাকে বড় করে। যাতে সে কঠোর সেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে যেখানে মেয়েদের ঘরের বাইরে যাবারই অনুমতি নেই, অন্তত: বাজার-ঘাট করাসহ নানা কাজে ছেলে হিসেবে বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারে।

মূল প্রসঙ্গে ফিরি আবার। বাংলা সাহিত্যে ঝড়ের প্রসঙ্গে আলাপ তুলতে গেলে খেদের সাথে আর একটি বিষয়ে আলাপ তোলা দরকার। জীবনানন্দ দাশসহ ত্রিশের পঞ্চকবি ব্যোদলেয়ার-এলিয়ট-ইয়েটস-পাউন্ড প্রভাবিত যে পশ্চিমী আধুনিকতা আমাদের সাহিত্যে আনলেন, তার প্রভাবে আমাদের কবিতা তথা সাহিত্য ‘আধুনিক’ হয়ে উঠলো ঠিকই, কিন্তু কোথাও কি আমাদের সাহিত্যের মূল শেকড় থেকেও বিচ্যুত হয়ে উঠলাম আমরা?

বাংলাদেশের উর্দূ কবি আহমেদ ইলিয়াসের ‘দ্য বিহারিজ অফ বাংলাদেশ’ বইটি থেকেই প্রথম জানতে পাই যে, ‘রামায়ণ’র নায়িকা সীতা থেকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পূর্বপুরুষও ছিলেন বিহারী। নজরুল ইসলামের পিতামহই বিহার থেকে পশ্চিম বাংলার সীমান্ত শহর আসানসোলের চুরুলিয়ায় এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। দুই পুরুষেই ‘খাঁটি বাঙালি’ হয়ে উঠলেও নজরুল বিহারী পূর্বপুরুষের কল্যাণে আরবি-ফার্সিসহ উর্দূ ও হিন্দি এবং হিন্দির কথ্য উপ-ভাষাগুলোতেও দক্ষ ছিলেন যার ছাপ মেলে তার অসংখ্য কবিতা ও গানে। রবীন্দ্রনাথও তরুণ বয়সেই ভানু সিংহ নামে ব্রজবুলী ভাষায় ‘ভানু সিংহের পদাবলী’ নামে অসংখ্য গান রচনা করেছেন। তেমন পদাবলীর কোন একটিতে রাধা বুঝতে পারছেন না এই শাওন গগনের ঘোর ঘনঘটায় কুঞ্জপথে তিনি কিভাবে যাবেন? এদিকে বিষম ঝড়, ‘উন্মাদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ/দমকত বিদ্যুৎ, পথতরু লুন্ঠিত, থরহর কম্পিত দেহ।’ নজরুলের গানেও আমরা পাই ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে’র কথা। আবার অতুল প্রসাদ সেনের গানে এমনি ঝড়-বাদলের রাত সম্পর্কে বলা হচ্ছে: ‘গগনে বাদল, নয়নে বাদল, জীবনে বাদল ছাইয়া; এসো হে আমার বাদলের বধূ, চাতকিনী আছে চাহিয়া।’

এরও বহু আগেই বাংলা সাহিত্যে ‘এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর/এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর/ তিমির ভরি ভরি ঘোর যামিনী থির বিজুরি পাঁতিয়া/ বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়বি হরি বিনে দিন রাতিয়া’র কথা লেখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ঝড় ও প্রেম বিষয়ক গানে বলা হচ্ছে, ‘চিনিলে না আমারে কি/ দীপহারা কোণে আমি ছিনু অন্যমনে/ ফিরে গেলে কারেও না দেখি!’ সেই গানে আকাশের বিদ্যুতৎবহ্নি অভিশাপ লিখে যায়। ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় ছবি ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙ্গল ঝড়ে’র অসামান্য চিত্রায়ণ আমরা দেখতে পাই। এভাবেই চৈত্র পার হয়ে বৈশাখ হয়ে বজ্রমাণিক দিয়ে আষাঢ়ের মালা গাঁথা হয়। গোটা দক্ষিণ এশিয়া বর্ষার জলে প্লাবিত হয়। বর্ষণ দিয়ে যে গোটা ভারত একসূত্রে গ্রথিত, সেটাই ভারতবর্ষ। কালিদাসের ‘মেঘদূতম’ থেকে মরুউষর পাকিস্থানের উর্দূ কবিতায়ও মেঘের মত কেশ বাঙলি মেয়েদের ‘যাদু’ বা ‘বাঙ্গাল কি যাদু’র কথা বলা হয়েছে যারা পশ্চিম থেকে সেই কুহকিনী দেশে যাওয়া পশ্চিমা পুরুষদের ভেড়া বানিয়ে ফেলে বা সোজা বাংলায় বশ্যতা মানায়। সেই শ্যামবর্ণ তবে দীঘলকেশী সুন্দরীদের ভয়ে বিচলিত থাকে উর্দূ কবিতার আর্য রূপসীরাও। পাছে বাণিজ্য বা কাজের সন্ধানে বাংলা মুল্লুকে যাওয়া তার বরটি কোনো বাঙালি নারীর হস্তগত হয়ে পড়ে!

পৃথিবী জুড়েই ঝড়ের প্রসঙ্গেই যেন আসে অন্ধকার ঘর ও হু হু বাতাস ও আকাশের বজ্রগর্জনের বিপরীতে জ্বলতে থাকা কোনো দীপশিখার কথা। নরমা জোন অ্যালায়াস মেরিলিন মনরো যিনি কাফকা, দস্তয়েভস্কি পড়তেন ও নিজেও লিখতেন মেধাবী কবিতা অথচ হলিউড যাকে এক মাংসপুতুল তথা স্বর্ণকেশী, নির্বোধ রূপসী বানিয়ে ছেড়েছিল, সেই মেরিলিনের মৃত্যুতে তাকে নিয়ে লেখা গান ‘ক্যান্ডল ইন দ্য উইন্ড’ বা ‘বাতাসে দীপশিখা’ গানটিই এলটন জন আবার গেয়েছিলেন প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর ‘এমনি বোধ হয় যেন বেঁচেছিলে তুমি তোমার জীবন/ বাতাসে দীপশিখা হয়ে/ কখনো জানোনি কাকে আঁকড়ে বাঁচতে হয়/আর কখন যে আসে বর্ষা মুষলধারে। (And it seems to me you lived your life. Like a candle in the wind. Never knowing who to cling to
When the rain set in.)

বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্ত

মেরিলিনকে নিয়ে লেখা এই গানের চারটি পংক্তির অক্ষম অনুবাদ করতে করতেই খেয়াল করছি লেখাটি আয়তনে অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবী জুড়েই কবিদের বা গীতিকারদের ব্যবহৃত যত চিত্রকল্পের কি অদ্ভুত মিল! বাংলার জর্জ’দা বা কলিম শরাফীদের উদাত্ত, পুরুষ কণ্ঠে ঝড়ের রাতে পরাণসখা বন্ধুর সাথে অভিসারের কথন শুনি আমরা। শেষ করছি সেই জিহ্বা কর্তিত নারী খনা’র বচন দিয়েই, ‘চৈত্রেতে থর থর/বৈশাখে ঝড় পাথর/জ্যৈষ্ঠেতে তারা ফুটে/তবে জানহ বর্ষা বটে।’

Advertisement
Share.

Leave A Reply