fbpx

মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন করতে পারবেন না ‘বালুখেকো সেলিম’: আপিল বিভাগের রায়

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

মেঘনা তীরবর্তী চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ২১টি মৌজায় অবস্থিত ডুবোচর থেকে সেলিম খান বালু উত্তোলন করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন আদালত। চার বছর আগে হাইকোর্ট সেলিম খানকে বালু তোলার অনুমতি দিয়ে এক রায় দিয়েছিল। রবিবার (২৯ মে) আদালত সেই রায় বাতিল করেছেন।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

এর ফলে ওই ২১ মৌজায় সেলিম খানের বালু উত্তোলন বন্ধই থাকছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

লিভ টু আপিলে বলা হয়, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে কোনো নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ প্রতিবেদনই যে একক ভিত্তি নয়, তা হাইকোর্ট বিভাগ উপলব্ধি করতে পারেননি। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে, পরিবেশ, পাহাড়ধস, ভূমিধস অথবা নদী বা খালের পানির স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন, সরকারি স্থাপনা (যথা ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, ফেরিঘাট, হাটবাজার, চা-বাগান, নদীর বাঁধ ইত্যাদি) এবং আবাসিক এলাকার কোনো ক্ষতি হবে কি-না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত গ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া কোনো বালুমহালে উত্তোলনযোগ্য বালু বা মাটি না থাকলে বা বালু বা মাটি উত্তোলন করার কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিনষ্ট বা সরকারি বা বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা জনস্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ওই বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন জেলা প্রশাসক।

সেখানে আরও বলা হয়, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে ডুবোচরের বালু উত্তোলনের বিষয়ে কোনো ধরনের মূল্যায়ন হয়নি। এমনকি রিটে উল্লেখিত মৌজাগুলো বিভাগীয় কমিশনার বালুমহাল হিসেবেও ঘোষণা করেননি। তাই হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীকে (সেলিম খান) বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বাতিলযোগ্য।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। তার বিরুদ্ধে মেঘনা নদীতে প্রায় ২০০ ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত একাধারে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। এসব বালু সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে।

এসকল অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এপ্রিলে চাঁদপুরে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২১ এপ্রিল দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সংস্থাটির সচিব মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, ‘চাঁদপুরে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে কারসাজি এবং মেঘনা-পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছিলেন চাঁদপুর জেলার লক্ষ্মীপুর ইউপির চেয়ারম্যান সেলিম খান।’

অভিযুক্ত সেলিম খানের বিরুদ্ধে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা ক্ষতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান দুদকের সচিব।

তিনি আরও বলেন, ‘সেলিম খানের বিরুদ্ধে মেঘনা নদীতে প্রায় ২০০ ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত নির্বিচারে বালু উত্তোলন করে অননুমোদিতভাবে বিক্রি করে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অগাধ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ এপ্রিল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিম চাঁদপুরে অভিযান চালায়।‘

অভিযানকালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়।

Advertisement
Share.

Leave A Reply