বর্গীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাজা গোয়ালা চৌধুরী সমগ্র বাড়ির চারপাশে পরীখা খনন করেছেন। যার ধ্বংসাবশেষ মেহেরপুর গড়পুকুর। এই গড়পুকুর কালের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে। ঐতিহ্যবাহী গড়পুকুরকে আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে মেহেরপুর পৌরসভা।
১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ বিঘার গড়পুকুরকে বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঐতিহাসিক গড় পুকুর হবে জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র।
এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি‘র) অর্থায়নে প্রাক্কলিত মূল্য ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স মাসুমা বেগম এন্টারপ্রাইজ চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়। জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে ঠিকেদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মিলন আশা প্রকাশ করছেন।
রাজশাহীর মেয়র রিটন জানান, বিভিন্ন কারণে গড়পুকুরকে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এতদিন আটকে ছিল। বিভিন্ন দেশের পুকুর ও নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র দেখে নকশা করা হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে খুলনা বিভাগের মধ্যে এটি হবে এক ব্যতিক্রম বিনোদন কেন্দ্র।
তিনি জানান, গড়পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনে ঢাল সুরক্ষা বেস্টনি, থাকবে গণমানুষের জন্য দু’টি পাবলিক টয়লেট, নিরাপত্তা রক্ষীর কামরা,শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা, পুরো গড় এলাকা হবে সবুজ বেস্টনি, পুকুরের চতুর্দিকে ওয়াকওয়ে, পুকুরের দক্ষিণ দিকে থাকবে নাট্যমঞ্চ, থাকবে চারদিক জুড়ে কংক্রিট বেঞ্চ, দুটি ফুড কর্নার, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা চেঞ্জিং রুম, দু’টি কফি হাউজ, গড়ের মাঝখানে ওভারব্রিজ,পুরো পুকুর জুড়ে থাকবে ৭টি সিঁড়ি, গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা, শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরণের রাইড, টিকিট কাউন্টার ইত্যাদি।
মেহেরপুরের ইতিহাস লেখক তোজাম্মেল আযম ঐতিহাসিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, একসময় অবিভক্ত নদীয়ার অন্তর্গত ছিলো মেহেরপুরের জনপদ। নদীয়ার বিখ্যাত শাসক রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও বেশ কিছুদিন মেহেরপুর শাসন করেছেন। রাজা গোয়ালা চৌধুরী পলাশীর যুদ্ধের আগে কৃষ্ণনগর থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। ওই সড়ক ধরেই বর্গী দস্যুরা মেহেরপুরে এসে ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যেতো। বর্গীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাজা গোয়ালা চৌধুরী সমগ্র বাড়ির চারপাশে পরীখা খনন করে রাখতেন। যার ধ্বংসাবশেষ মেহেরপুর গড়পুকুর।
