fbpx

রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বিকাশে কৌশলগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেয়ার তাগিদ

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন অচল অবস্থায় রয়েছে, এদিকে তহবিলের প্রবাহ আগের চেয়ে আরও নাজুক, তাই ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বিকাশে কৌশলগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণ: আমাদের কি কৌশলগত পরিবর্তন দরকার?’ শীর্ষক নীতি সংলাপে এ পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা । ব্র্যাক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ যৌথভাবে রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে এই সংলাপের আয়োজন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের গবেষণালব্ধ চারটি গবেষণাপত্র এই সংলাপে উপস্থাপন করা হয়, যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পরিবর্তিত চাহিদা, ২০২৩ ও তার পরবর্তীতে তাদের জন্য সম্ভাব্য জীবিকার মাধ্যম এবং এসব মোকাবিলায় স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের ভূমিকা এবং এসব ইস্যুর পাশাপাশি অর্থের নতুন উৎসের অনুসন্ধান করেছে।

গবেষণাপত্রের উদ্বৃতি দিয়ে বক্তারা হোস্ট কমিউনিটির চাহিদার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার উপর জোর দেন। বলেন, হোস্টদের নিরাপত্তাহীনতা দূর করা হলে তা হোস্ট-রোহিঙ্গা সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে; এইভাবেই প্রশস্ত হবে কৌশলগত প্রক্রিয়া নির্ধারণের পথ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এ এ মান্নান বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর অনেক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। রোহিঙ্গারা এখানে আসার পর শুরু থেকে যেসব সমস্যা ছিল, এখন বাস্তবে সে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে এই মহূর্তে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রাসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরও অর্থায়ন দরকার।”

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক জনাব আসিফ সালেহ্  বলেন, “যা স্পষ্ট তা হল যে জনসংখ্যা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং হোস্ট সম্প্রদায় এবং শরণার্থী সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক সংহতির গতিশীলতাও পরিবর্তিত হচ্ছে। এই সব বিবেচনা করে,আমাদের শরণার্থীদের জন্য একটি মধ্য-মেয়াদী কৌশল সন্ধান করা উচিত কারণ আমরা তাদের স্বদেশে নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য ক্রমাগত সমর্থন করছি। একটি ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে বর্তমান কাজগুলো স্বল্পমেয়াদী মানবিক সংকট-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উন্নয়ন পদ্ধতির দিকে সরানো দরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একমাত্র সমাধান মিয়ানমারে তাদের টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন।”

বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সু-জিন রি বলেন, “আমরা দীর্ঘস্থায়ী সংকটে আছি, জাতিসংঘের সংস্থা হিসেবে এই বিষয়টিকে কৌশলগত ভাবে দেখতে হবে আমাদের। ষষ্ঠ বছরে এসে তহবিল হ্রাস পাচ্ছে। এই মুহুর্তে সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ও খাবারের মতো নূন্যতম চাহিদাগুলোকে কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা দেখতে হবে। আমাদের সহনশীলতা, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমাজের উৎপাদনশীল অংশ হয়ে ওঠে।”

ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মিশন পরিচালক ক্যাথরিন ডেভিস স্টিভেনস বলেন, “আমাদের বাজার ভিত্তিক সমাধানের উপর ফোকাস করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতে ফিরে যেতে পারে। একই সময়ে, আমাদের হোস্ট সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা ও অন্যান্য চাহিদার সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।  আমি রোহিঙ্গাদের জীবিকা, শিক্ষার সুযোগ, নিরাপত্তা, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সুযোগের উপর জোর দিতে চাই। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমাদের মোট ১.৯ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে। রোহিঙ্গা সংকটে ইউএসএআইডির সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”

কানাডা হাই কমিশনের রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্সের হেড অব কোঅপারেশন বিবেক প্রকাশ বলেন, “আমরা মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখছি। কানাডা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এগুলোর মাঝে প্রধান হলো এলপিজি গ্যাস সহায়তা। রোহিঙ্গা এবং হোস্ট কমিউনিটির ভেতর সামাজিক সংহতি টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যাতে হোস্ট কমিউনিটি নিজেদের পিছিয়ে পড়া বলে মনে না করে। ভুলে গেলে চলবে না যে, এটি বাংলাদেশের একটি মানবিক সংকট। যেহেতু রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ সীমিত, তাই এর আর্থিক তাৎপর্য বেশি।”

সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “গবেষণা ও এর প্রভাবকে সার্বজনীন করে তুলতে এতে কোনওভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মতামত তুলে ধরতে পারলে আরও ভালো হতো।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে সচেষ্ট রয়েছে । তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

Advertisement
Share.

Leave A Reply