fbpx

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা আজ

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শাঁখের ধ্বনি, ধূপের সুগন্ধি, ঢাক-করতাল-কাঁসার বাদ্যের তালে আরতির মাধ্যমে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে মহাউৎসব। দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী আজ। সোমবার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই চলছে পূজা অর্চনা।

এবার অষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। রাতে হবে সন্ধি পূজা। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

শাস্ত্রমতে, দেবীকে আসন, বস্ত্র, পুষ্পমাল্য এ ধরনের ষোল উপাদান (ষোড়শ উপাচার) দিয়ে মহাঅষ্টমীর পূজা-অর্চনা করা হয়। প্রত্যুষে ত্রিনয়নী দেবীর চক্ষুদান করা হয়। এ দিনে মহিষাসুরকে বধ করে দেবী বিজয় লাভ করেছিলেন।

এছাড়া কুমারী নারীকে দেবী ও মাতৃরূপে সাজিয়ে হবে কুমারী পূজা। রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে বেলা ১১টায় মহাসমারোহে কুমারী পূজা হবে। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করবেন ভক্তরা। এর মাধ্যমে নারীদের প্রতি সম্মান জানানো হয় বলে জানান ভক্তরা।পূজা-অর্চনা শেষে দেবীর কৃপালাভের আশায় তার চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন ভক্তরা।

শাস্ত্রমতে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়।

শ্রীরাম কৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য। এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চোদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।

নির্বাচিত কুমারীকে মহাষ্টমীর দিন ভোরে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তাকে সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেওয়া হয়। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপাচারে (ষোলো উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিকে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।

রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘন্টে বলা হয়েছে, সোমবার মহাঅষ্টমী পূজা আনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকাল ৪ টা ৪৪ মিনিটে গতে এবং সমাপন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুস্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুস্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে । সন্ধ্যা- আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপি এ উৎসবের।

এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে দেবীর গমন নৌকায় যার অর্থ জল এবং শস্যবৃদ্ধি। বিগত দুটি বছর করোনার প্রকোপ পুজোর আনন্দকে কিছুটা হলেও ফিকে করে দিয়েছিল। কিন্ত এবার সেই চিরচেনা রূপে আবারও মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে উঠবে ঢাকের বাজনা।

গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যারতি, ধূনচী নাচসহ পূজার পাঁচদিনই থাকছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। অপরদিকে, রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, এ বছর উমার আগমন গজে এবং ফিরে যাবেন নৌকায়। মায়ের গজে আগমনের ফলশ্রুতি হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর নৌকায় গমনের ফলশ্রুতি শস্যবৃদ্ধি এবং জলবৃদ্ধি। এ বছর দেশের অনেক স্থান বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে, অনেক শস্যাদি নষ্ট হয়েছে। তারই একটা প্রভাব আসছে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেছেন, সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগের তুলনায় এবারও কিছু পূজার আয়োজন বেড়েছে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply