বাংলাদেশে বলিউড সিনেমা ‘পাঠান’ মুক্তি পাওয়া নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ইন্ডাস্ট্রির এক পক্ষ ছিল পাঠান মুক্তির পক্ষে অন্য পক্ষ চায়নি সিনেমাটি মুক্তি পাক। কিন্তু বাংলাদেশের হল মালিকরা সবসময় পাঠান মুক্তির পক্ষে ছিল। এমনকি দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি জুড়ে পাঠান মুক্তির আভাসে রোজার আগেই হল মালিকদের মধ্যে ঈদ উৎসবের আমেজ দেখা গিয়েছিল!
কারণ, মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছিলেন তারা।
২৪ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মার্চ দুই দফায় মুক্তির কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি পায়নি ‘পাঠান’। আর এতেই ক্ষেপেছেন হল মালিকরা। চলমান হলগুলো বন্ধের হুমকি দিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। তাদের দাবি, বিদেশি তথা হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে হবে। নতুবা অচিরেই তারা হল বন্ধ করে দেবেন। কারণ দেশের ছবি চালিয়ে লোকসানের চোরাবালি থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না তারা।
শনিবার (৪ মার্চ) ইস্কাটনে এক সংবাদ সম্মেলনে হল বন্ধের ঘোষণাস্বরূপ হুমকি দিয়েছে হল মালিক সমিতি। ‘সিনেমা হল বাঁচলে, চলচ্চিত্র বাঁচবে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেছেন, ‘এমতাবস্থায় সিনেমা হল চালু রাখার আর কোনও বাস্তব যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না বিধায় বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি।’
এর আগে ‘পাঠান’ মুক্তি দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন নির্মাতা-প্রযোজক-পরিবেশক অনন্য মামুন। বিষয়টি নিয়ে সিনেমা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মতামত জানতে চায় মন্ত্রণালয়। সমিতিগুলোও জানায় সবুজ সংকেত।
কিন্তু এরপরও মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের কোনও খবর আসছে না। এই নীরবতাকে ‘না’ সূচক সিদ্ধান্ত মনে করছেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। সেজন্যই তারা সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন।
সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমাদের প্রতিনিধিদের সচিবালয়ে ডেকে বলেছিলেন, ‘পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অনাপত্তি থাকলে সরকার বছরে অন্তত ১০টি উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেবে।’ এরপর চিত্রনায়ক আলমগীরের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ’র ব্যানারে প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ বছরে ১০টি ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির ক্ষেত্রে অনাপত্তি জানিয়ে লিখিত প্রস্তাবনা তথ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। সকল বাধা অপসারিত হওয়ার পরও আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ‘না’ সূচক মনোভাবের পরিচায়ক।’
ঠিক কবে নাগাদ হল বন্ধ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নেতারা জানান, টেকনিক্যাল কারণে হল বন্ধ করে দেয়ার নির্দিষ্ট কোনও তারিখ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে যে কোনও দিন সব সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনটাই ভাবছে প্রদর্শক সমিতি ও হল মালিকরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম, সংস্কৃতি সমাজ কল্যাণ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক আর এম ইউনুস রুবেল প্রমুখ। তাদের সম্মিলিত দাবি, বছরে ১০টি ভারতীয় ছবি আমদানির চূড়ান্ত অনুমতি না দিলে হলগুলো একে একে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে নির্দিষ্ট কোনও তারিখ তারা উল্লেখ করেননি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালেও হিন্দি সিনেমা আমদানির বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ঢালিউডের তারকারা। সে সময় কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নেমে মিছিল পর্যন্ত করেছিলেন শাকিব খান, জায়েদ খান, মিশা সওদাগর, পরীমণিসহ অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।