fbpx

‘হাওয়া’ নিয়ে ষড়যন্ত্র, উদ্বিগ্ন নির্মাতারা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

‘হাওয়া’ সিনেমার পালে লেগেছে হাওয়া, তেমনি বাংলাদেশের সিনেমার পালেও যে  হাওয়া লেগেছে সেটা ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ দেখে সবাই বলছেন। কিন্তু ‘হাওয়া’ সিনেমা নিয়ে চলছে ‘হাইকোর্ট’ দেখানোর খেলা! অনেকেই বলছেন এটা বাংলা সিনেমার প্রসারের ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র।

সিনেমায় ‘খাঁচায় বন্দি শালিক পাখি দেখানো ও পাখি মেরে খাওয়ার দৃশ্য’ রাখায় নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের নামে ২০ কোটি টাকার মামলা হয়েছে। এমনকি বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে নির্মাতাকে।

সোমবার (২২ আগস্ট) সেন্সর বোর্ডকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।

গত ১১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখেন বন বিভাগের অপরাধ দমন ইউনিটের চার সদস্যবিশিষ্ট একটি দল। তারা জানান, এতে বন্য প্রাণী আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। পরবর্তীতে নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

গত বুধবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। নির্মাতা সুমনের বিরুদ্ধে করা মামলায় বাদী হয়েছেন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নারগিস সুলতানা। সাক্ষী করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে কাজ করা অপর তিন সদস্য আব্দুল্লাহ আস সাদিক, অসীম মল্লিক ও রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে।

কিন্তু অনেকেই মনে করছেন সিনেমাকে এই যে আইনের বেড়াজালে বেঁধে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে, এটা দেশের সংস্কৃতিমনা মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ, বিশেষকরে যারা সিনেমা নির্মাণের সাথে জড়িত। এমন আইন সিনেমা নির্মাণের পরিপন্থি বলেও মনে করছেন তারা।

নির্মাতা মোস্তফা সারয়ার ফারুকী ১৮ আগস্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি জানিনা ঐ আইনটার মধ্যে আছেটা কী। কিন্তু আইন যদি বলেও সুমন দোষী, তাইলে পরিস্কার কথা ঐ অচল আইন বদলান। এইসব সার্কাস বন্ধ করেন।’

নির্মাতা নূরুল আলম আতিক ২৩ আগস্ট তার ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘একটা বদ হাওয়া লাগলো খাঁচায়… সিনেমা ‘হাওয়া’ কার গায়ে জ্বালা ধরায়, কেন ধরায় তা বুঝতে চাই। বেশিরভাগ জনসাধারণের কাছে যা সুবাতাস, তাকে বিষবাষ্প না বানালে চলছে না? আহা, কতোকাল বাদে একটা শিল্পের আরোগ্য হচ্ছে, আর তা দেখে উনাদের পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে! ভাইরে, অস্তগামী সূর্যের দিকে তাকিয়ে কেবল পায়ের পাতা ভিজিয়ে আমরা গভীর সমুদ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো? ‘হাওয়া’ টিমকে সময়ের সবচেয়ে সুনির্মিত, লোকপ্রিয় সিনেমাটি উপহার দেয়ার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কথা; আর আমরা কিনা তাদেরকেই হাইকোর্ট দেখাচ্ছি!’

নির্মাতা আকরাম খান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের চলতি ব্যবস্থায় ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের নামে কোটি টাকার মামলা, বন্ধ করার আইনি নোটিশ পাঠানো একটি চূড়ান্ত ভণ্ডামি৷ এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উপর নজরদারি বাড়ানোর, চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের পথকে কণ্টকিত করার ষড়যন্ত্র৷ বন্যপ্রাণীর প্রতি কোনো নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে কিনা, আইন ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা সেটা সমন্ধে পরিস্কার হতে চাইলে পরিচালককে ডেকে তার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্যাখ্যা চাওয়া যেত৷ আমি নিশ্চিত যে কোনো প্রকৃত শিল্পী বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে বেশি দায়িত্ববোধ সম্পন্ন ও সংবেদনশীল।’

আরেক নির্মাতা এস এ হক অলীক লিখেছেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইদানিং রাষ্ট্রীয় আইনকে ব্যবহার করে কথায় কথায় যারা আমাদের নাটক এবং চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন, তাদের এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাই। চলচ্চিত্র, নাটক তথা সংস্কৃতি বিকাশের বৃহৎ এই মাধ্যম জঙ্গিবাদ প্রতিবন্ধক। দীর্ঘদিন পর যখন আমাদের চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক তখনই প্রচলিত আইনের অপব্যবহার করে যারা সংস্কৃতির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে,জঙ্গিবাদকে প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়। আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা,আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেই সংস্কৃতি বিকাশে একত্রিত হয়ে এই অপশক্তি রুখতে হবে।’

সিনেমাকে বলা হয় সমাজের দর্পন। সমাজের খুঁটিনাটি বিষয় উঠে আসে সিনেমায়। কিন্তু যখন সিনেমাকে রাষ্ট্রীয় আইনের বেড়াজালে আটকে ফেলার চেষ্টা করা হয় তখন সেটা যে কোনো সংস্কৃতির জন্যই হুমকিস্বরূপ। সময় থাকতে প্রতিরোধ না করলে এর ফলাফল হবে ভয়াবহ। তাই আগে থেকেই সতর্ক হওয়াই বাঞ্চনীয়।

উল্লেখ্য, ‘হাওয়া’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ২৯ জুলাই। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাজিফা তুষি, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, রিজভী রিজু, মাহমুদ আলম, বাবলু বোস প্রমুখ।

Advertisement
Share.

Leave A Reply